রক্তিম মিত্র
আবার বিতর্কের কেন্দ্রে সেই পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি। কে চেয়ারম্যান হবেন, তা নিয়ে যথারীতি আবার বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। শাসকপক্ষ চাইছে, তাঁদের মনের মতো কোনও বিধায়ককে এই চেয়ারে বসাতে। এখনও পর্যন্ত দৌড়ে এগিয়ে আছেন মুকুল রায়। যদি বিরাট কোনও শুভবুদ্ধির উদয় না হয়, তাহলে সম্ভবত মুকুল রায়ই এর চেয়ারম্যান হতে চেলেছেন।
বিধানসভার প্রথা অনুযায়ী, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান বিরোধ দল থেকেই করা হয়। লোকসভাতেও এই প্রথা চলে আসছে। সেই কারণেই বিজেপি ক্ষমতায় থাকলেও পিএ কমিটির চেয়ারম্যানের নাম অধীর চৌধুরি। কংগ্রেসের সরকার যখন ছিল, তখন এই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন মুরলি মনোহর যোশি। এটাই নিয়ম। এটাই প্রথা। এটাই সৌজন্য।
কিন্তু রাজ্য রাজনীতি বা রাজ্য বিধানসভা সৌজন্যের নিয়ম মেনে খুব একটা চলে না। পাঁচ বছর আগে এই নিয়ে বিতর্কের শুরু। বাম–কংগ্রেসের মনোনীত প্রার্থীকে বাদ দিয়ে স্পিকার মশাই হঠাৎ করে চেয়ারম্যান ঘোষণা করে দিলেন মানস ভুঁইয়াকে। যিনি তৃণমূলের দিকে এক পা বাড়িয়ে ছিলেন। সব জল্পনাকে সত্যি করে কয়েক মাসের মধ্যে সত্যি সত্যিই তৃণমূলে যোগ দিলেন। এরপর কমিটির চেয়ারম্যান করা হল শঙ্কর সিংকে। যিনি কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে জয়ী হলেও তৃণমূলের পতাকা ততদিনে ধরে নিয়েছিলেন।
আবার সেই একই প্রবণতা। দলত্যাগী মুকুল রায়কেই হয়ত বসানো হবে এই আসনে। সরকারিভাবে মুকুল এখনও বিজেপির বিধায়ক। সেদিক থেকে স্পিকার মশাই বলতেই পারেন, বিরোধীদের একজনকেই তো করা হয়েছে। কিন্তু এই মুকুল রায় কয়েকদিন আগেই ঘটা করে তৃণমূলে যোগ দিলেন। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে। দলত্যাগ বিরোধী আইনে তাঁর সদস্যপদ খারিজ হওয়ার কথা। স্পিকার নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে হয়ত বিষয়টা ঝুলিয়ে রাখবেন (যেভাবে গত দশবছর ধরে ঝুলিয়ে রাখছেন)। কিন্তু এরকম একজনকে যদি পিএ কমিটির চেয়ারম্যান করে দেওয়া হয়, সেটা চরম প্রহসন ছাড়া আর কী?
হ্যাঁ, স্পিকারের বিশেষ এক্তিয়ার আছে। বিশেষ ক্ষমতা আছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ স্পিকার পদকে আরও কলঙ্কিতই করবে। সত্যিই তো, স্পিকারের অনেক ক্ষমতা। অনেক দায়িত্ব। বিধানসভায় মন্ত্রীরা যেন নিয়মিত প্রশ্নের উত্তর দেন, সেটা নিশ্চিত করা তাঁর দায়িত্ব। গত দশ বছরে সেই দায়িত্ব পালন কতটুকু করতে পেরেছেন? প্রতিটি দপ্তরের বাজেট নিয়ে আলোচনা হবে, এটাই সাধারণ নিয়ম। কিন্তু দশ বছরে অধিকাংশ বাজেট আলোচনা ছাড়াই গিলোটিনে পাঠানো হয়েছে। কোনগুলো তাঁর আসল কাজ, আসল দায়িত্ব, সেটা স্পিকার মশাই বেমালুম ভুলে গেছেন। তিনি বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করেন বাজেট গিলোটিনে পাঠানোর জন্য। তিনি বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করেন পেটোয়া লোকেদের পিএ কমিটির মাথায় বসানোর জন্য।
যেখানে তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করার কথা, সেখানে তিনি নিশ্চুপ থাকেন। তাঁকে যাবতীয় ক্ষমতা কেন খারাপ কাজেই প্রয়োগ করতে হয়! সত্যিই কি স্পিকার হিসেবে কোনও সম্মান এই মানুষটির প্রাপ্য?