তমাল সেনগুপ্ত
প্রথমেই বলে রাখি, আমি একজন ভ্রমণরসিক। সারাবছরই এখান–ওখান ঘুরে বেড়াই। নিজের জেলাকে যত না চিনি, তার থেকে অনেক বেশি চিনি পাহাড়কে। পাহাড় মানে শুধু দার্জিলিং নয়। কার্শিয়াং, কালিম্পং লাগোয়া কত ভাল ভাল জায়গা আছে। কত অচেনা গ্রাম, যেগুলো এখনও সেভাবে পর্যটনের মানচিত্রে আসেনি।
লকডাউনের ঠিক আগেও একবার পাহাড় সফর করে এসেছি। টানা তিন মাসের লকডাউনে প্রায় হাঁফিয়ে ওঠার মতো অবস্থা। কেমন যেন দমবন্ধ করা অবস্থা। বাড়ির বাইরে যে বেরোচ্ছি না, এমন তো নয়। সবাই বেরোচ্ছে। যদি করোনা হওয়ার হত, এতদিন কোনকালে হয়ে যেত। নিজের এলাকায় থাকলে যদি না হয়, তাহলে বাইরে গেলে কেন হবে? এই সময় অফুরন্ত ছুটি। পাহাড়ি সেই গ্রামে যদি গিয়ে থাকা যেত, আমার মনে হয়, ভালই হত।
আমার এলাকাতেও ভিনরাজ্য থেকে অনেকে ফিরে এসেছেন। এলাকার অনেকেই চাকরি সূত্রে কলকাতায় ও ভিনরাজ্যে থাকেন। তাঁরাও ফিরে এসেছেন। ছোট মফস্বল শহর। এখানে সবাই সবার সঙ্গেই মেশে। একসঙ্গে সবার আড্ডা হয়। সেসব তো বন্ধ হয়নি। আমার প্রশ্ন, নিজের এলাকায় এত এত মানুষের সঙ্গে থাকতে বাধা নেই, অথচ পাহাড় বা সমুদ্রে গেলেই যত সমস্যা! সেখানে তো কেউ জমায়েত করতে যাচ্ছে না। এখানে যখন গরমে সবাই হাসফাস করছেন, তখন যদি ওই নির্জন পাহাড়ি গ্রামে কয়েকদিন কাটিয়ে আসতে পারতেন, তাহলে ভালই হত।
কিন্তু বেড়ানোর কথা শুনলেই কেউ কেউ এমন ভান করছেন যেন বিরাট একটা অপরাধ। মন্দির খোলা থাকবে। সেখানে লোকে গিজগিজ করবে। মদের দোকান খোলা থাকবে। সেখানে এক কিলোমিটার লাইন পড়বে। তাতে বাঙালির আপত্তি নেই। যত আপত্তি যেন বেড়াতে গেলে। যেন ওই পাহাড়ে গেলেই করোনা নিয়ে ফিরতে হবে।
আসলে, ওই পাহাড়ি গ্রামে হেঁটে বেড়ানোর আনন্দটাই লোকগুলো বুঝল না। এরা বেড়ানো মানে বুঝল শুধু ভিড়ে গিজগিজ করা পুরী, দিঘা বা দার্জিলিং। তার বাইরে কত অজানা জায়গা আছে, জানার চেষ্টাই করল না। আমার মনে হয়, পর্যটনের ব্যাপারে সরকারের সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা দরকার। বাকি সবকিছু যখন খুলে দেওয়া হয়েছে, তখন পর্যটন বাকি থাকবে কেন? মানুষ যদি কয়েকটা দিন একটু নির্জনে কাটিয়ে আসে, তার মনের ভাইরাসগুলো অন্তত দূর হবে।