ভুবন সোম
তামিলনাড়ু এত বড় রাজ্য। সেখানে ভোট একদফায়। কেরল, অসম তুলনায় ছোট রাজ্য। সেখানেও ভোট এক দফায়। কিন্তু বাংলায় ভোট হচ্ছে আট দফায়। সত্যিই কি বাংলার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ, যার জন্য আট দফায় ভোট করতে হচ্ছে? নানা মহলেই এই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। রাজ্যের শাসক দল সোচ্চারভাবে এর বিরোধিতা করছে। শাসকদলের অনুগত বুদ্ধিজীবীরাও আসরে নেমেছেন।
আবার কেউ কেউ মনে করছেন, বাংলার ভোট আট দফায় করতে হচ্ছে, এটা বাংলার লজ্জা। বাংলার সরকারই এই জায়গায় বাংলাকে এনে দাঁড় করিয়েছে। জেলায় জেলায় হিংসা এতটাই বেড়ে গেছে, এছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। কিন্তু তারপরেও প্রতি দফাতেও ভোটকে ঘিরে চূড়ান্ত মারামারি, হুমকি, শাসানি এসব দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশক্ষেত্রেই অভিযুক্ত রাজ্যের শাসক দল।
ভোটে যেন পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী পাওয়া যায়, সেই কারণেই নাকি আটদফা। তারপরেও টিভিতে এই দৃশ্যগুলো দেখতে হচ্ছে কেন? ভোট কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রকাশ্যেই হুমকি দিচ্ছেন শাসকদলের নেতারা। অভিযোগগুলো মোটেই বানানো নয়। ক্যামেরায় পরিষ্কার ধরা পড়ছে দৃশ্যগুলো। ক্যামেরার সামনেই যারা এতটা বেপরোয়া, ক্যামেরা না থাকলে তারা কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, সহজেই বোঝা যায়। বিভিন্ন এলাকায় এরক শাসানি যখন চলছে, কই, তখন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে তো দেখা যাচ্ছে না। প্রকাশ্যেই প্রার্থীকে মারধর করা হচ্ছে, গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হচ্ছে। এত সাহস এই গুন্ডাবাহিনী পায় কোত্থেকে? শাসকদলের মদত আছে, পুলিশের প্রশ্রয় আছে, সে তো বোঝাই যায়। নইলে কেউ এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে না। কিন্তু এই নির্লজ্জ ঘটনাগুলোর পর নির্বাচন কমিশনেরই বা ভূমিকা কী? এইসব ঘটনার কতটুকুই বা টিভিতে ধরা পড়ে? যা ঘটে তার পাঁচ শতাংশও হয়ত ধরা পড়ে না। কিন্তু যেটুকু ধরা পড়ছে, তা দেখলেই শিউরে উঠতে হয়। প্রকাশ্যে ভিডিও ফুটেজ দেখার পরেও প্রশাসন নীরব কেন? কেন এই দুর্বৃত্তদের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হবে না? সেই দুর্বৃত্তরা নিশ্চয় দলকে এতখানি ভালবাসে না যে লাঠি হাতে ভরদুপুরে শাসাতে যাবে। তার মানে, কেউ না কেউ তো টাকার বিনিময়ে তাদের নিয়োগ করেছে। সেই লোকগুলোকে খুঁজে বের করা কি সত্যিই কঠিন? একটু চেষ্টা করলেই তাদের নাগাল পাওয়া যায়।
কিন্তু তথাকথিত কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ও নির্বাচন কমিশনকে কার্যত নীরব থাকতেই দেখা যাচ্ছে। আর তারা নীরব বলেই এই দুর্বৃত্তরা এতখানি সাহস পায়। নির্বাচন কমিশন যদি এমন ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে, তবে আটদফা কেন, আশি দফায় ভোট করেও সন্ত্রাস থামানো যাবে না। কয়েকটা ক্ষেত্রে কড়া ব্যবস্থা নিলেই এই গুন্ডামি অনেকটা কমে যেত। কিন্তু তেমন কোনও উদ্যোগই দেখা গেল না। তাই নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় সত্যিই আমরা হতাশ।