বিপ্লব মিশ্র
যেমন রাজ্যপাল, তেমনই মুখ্যমন্ত্রী। কে কত ছেলেমানুষ, এ যেন তারই প্রতিযোগিতা চলছে। মাঝে মাঝেই ভাব হয়, দুদিন পরই ঠিক কোনও না কোনও কারণে ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। একজন টুইট করে বসেন। অন্যজন আমলাদের দিয়ে পাল্টা চিঠি লিখিয়ে বসেন। দুটোই প্রকাশ্যে চলে আসে। একজন সাংবাধানিক প্রধান, একজন প্রশাসনিক প্রধান। দুজনেই বালখিল্যতার চরম জায়গায় পৌঁছে যান।
ভোটের পরও সেই ট্রাডিশন সমানে চলেছে। শপথের দিনই রাজ্যপাল একপ্রস্থ খোঁচা দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী চুপ থাকার পাত্রী নন। তাঁকেও পাল্টা কিছু বলতেই হবে। ব্যাস, আবার নারদ–নারদ লেগে গেল। রাজ্যপাল বললেন, তিনি শীতলকুচি যাবেন। যেতে পারেন কিনা, সে অন্য প্রশ্ন। রাজ্যপালের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলা যেতেই পারত। কিন্তু তাহলে তো ঝগড়া সামনে আসবে না। ওটাকে তো সামনে আনতে হবে। প্রকাশ্যে তাঁকে অপদস্থ করতে হবে। অতএব, শুরুতে মন্ত্রীদের লেলিয়ে দেওয়া হল। তারপর নেমে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রকাশ্যেই রাজ্যপাল বিরোধী মন্তব্য।
রাজ্যপাল শীতলকুচি গেলে কীরকম অভ্যর্থনা জুটবে, আগে থেকেই জানা ছিল। ডিএম, এস পি থাকবেন না। ব্যস্ততা দেখিয়ে কেটে পড়বেন। এমনটাই হওয়ার ছিল। আসলে, ডিএম, এসপিদের কাছে বার্তা চলে গেছে। কী রকম অসভ্যতা করলে মাননীয়া খুশি হবেন, এতদিন তাঁরা বিলক্ষণ শিখে গেছেন। সৌজন্য দেখাতে গেলে কী পরিণতি হতে পারে, সেটাও অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁরা জানেন। আর তৃণমূলের জেলা নেতারাও বুঝে গেছেন, রাজ্যপাল এলেই তাঁকে গো ব্যাক স্লোগান দিতে হবে, অপদস্থ করতে হবে।
শীতলকুচিতে নিহতদের পরিবারের লোককে চাকরি দেওয়া হল। খুব ভাল কথা। ঠিক রাজ্যপাল আসার আগের দিনে ঢাকঢোল পিটিয়ে এমন অনুষ্ঠান করে নিয়োগপত্র দেওয়া খুব জরুরি ছিল? মানবিক কারণে চাকরি দেওয়া এক জিনিস, আর ঢাকঢোল পিটিয়ে তার প্রচার আরেক জিনিস। দ্বিতীয়টা সত্যিই ঘৃণ্য কাজ। এতে সেই পরিবারগুলোকে যেমন অপমান করা হয়, তেমনি নিজেদের দেউলিয়াপনাও প্রকট হয়ে যায়।
প্রশাসন যদি রাজ্যপালের সঙ্গে ন্যূনতম সৌজন্য দেখাত, কী এমন হতে পারত! রাজ্যে যে নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস চলছে, এর দায় কি সরকার বা শাসকদল এড়াতে পারে? রাজ্যপাল ফিরে এসে হয়ত রাজ্য সরকারের মৃদু সমালোচনা করতেন। তাতে কি খুব মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত! এটুকু সমালোচনা নেওয়ার মানসিকতা নেই! এটুকু সহিষ্ণুতা সরকারের থাকবে না? তার বদলে তাঁকে ঘিরে এই অসভ্যতা প্রদর্শন খুব জরুরি ছিল? প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের অনুমোদন না থাকলে এমন অসভ্যতা দেখানো যায়!
কোচবিহার জেলার নেতারাও ধন্যি। দু–দুজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী গোহারান হেরে গেলেন। জেলা সভাপতি হারলেন। অধিকাংশ বিধায়ক হারলেন। এরপরেও মানুষের ঘৃণাটা কোন পর্যায়ে আছে, বুঝতে পারছেন না? মানুষ যে এই জাতীয় গুন্ডামিকে পছন্দ করছেন না, এটা বুঝছেন না?