উত্তম জানা
অনেকদিন ধরেই অভিযোগ উঠছে, নেতারা কোভিড বিধি মানছেন না। তাঁরা মিটিং করছেন, মিছিল করছেন, জনসভা করছেন, রোড শো করছেন। আর হাজার হাজার জনতা মাস্ক ছাড়াই সেই মিছিলে সামিল হচ্ছেন। শেষে কোর্টের ধমক খেয়ে কিছুটা সম্বিত ফিরল।
এই আবহে অন্তত একজন আছেন, যিনি দারুণ সচেতনতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। এতদিন তিনি কোথায় ছিলেন, কেউ জানত না। নিশ্চিতভাবেই অজ্ঞাতবাসেই ছিলেন। সিবিআই তাঁকে তলব করছে। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি এই পরিস্থিতিতে হাজিরা দিতে পারবেন না। সিবিআই যদি একান্তই তাঁকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে চায়, তাহলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে করতে পারে।
এই মহান ব্যক্তিটির নাম বিনয় মিশ্র। গত কয়েক মাসে কয়েক লক্ষ বার তাঁর নাম কাগজে ছাপা হয়েছে। টিভিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ, গরু এবং কয়লা পাচারের অন্যতম চাঁই এই বিনয় মিশ্র। আরও যা যা অভিযোগ আছে, সেগুলো না হয় উহ্য থাক। সেই বিনয় মিশ্র কী অবলীলায় বলতে পারেন, এখন হাজির হব না।
দোষটা বিনয় মিশ্রর নয়। সিবিআই নিজেকে এই জায়গায় নামিয়ে এনেছে। তাদের কেউ আর পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না। বিনয় মিশ্ররা বিলক্ষণ জেনে গেছেন, এই সিবিআই কর্তাদের দৌড় কতদূর। তিনি বিলক্ষণ জানেন, ভোটের আগে হাওয়া গরম করতে একটু তৎপরতা ছিল। ভোট মিটে গেছে। এখন তাঁকে চটানোর ক্ষমতা এই সিবিআই কর্তাদের নেই।
কয়লা কাণ্ড নিয়ে বা গরু কাণ্ড নিয়ে সিবিআইয়ের সত্যিই যদি কিছু করার থাকত, অনেক আগেই করতে পারত। তদন্তের নামে অষ্টরম্ভা হয়েছে। লোক দেখানো কিছু জিজ্ঞাসাবাদ। প্রমাণ লোপাট করার পর্যাপ্ত সুযোগ দিয়েছেন সিবিআই কর্তারা। যাঁরা পাচারের পান্ডা, তাঁরা নিশ্চয় সিবিআয়ের অপেক্ষায় প্রমাণগুলো সাজিয়ে বসে থাকবেন না। যা যা নষ্ট করার, তার বেশিরভাগই নষ্ট করা হয়ে গেছে।
সিবিআই লোকদেখানো কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করছে। ঠিকঠাক চার্জশিট পর্যন্ত দিতে পারছে না। প্রমাণ দেখাতেও পারছে না। ফলে, বেমালুম জামিন হয়ে যাচ্ছে। বুক ফুলিয়ে সেই কীর্তিমানরা বলে বেড়াচ্ছে, এই তো সিবিআই নিয়ে গেল। কই, কিছুই তো করতে পারল না। প্রমাণ হয়ে গেল, আমি নির্দোষ। প্রমাণ হয়ে গেল, আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে।
হ্যাঁ, সিবিআইয়ের অপদার্থতায় এইসব লোকেরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সাহস পায়। সিবিআইয়ের অপদার্থতায় এরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করতে পারে। বিনয় মিশ্র বেশ ভালভাবেই জানেন, সিবিআইয়ের দৌড় কতদূর। তিনি জানেন, কার ফোন কার কাছে যায়। তাই তিনি বলতে পারেন, জেরায় আসব না। এরপরেও সিবিআই কর্তাদের লজ্জা হয় না। এমন একটা প্রতিষ্ঠানকে আর কত নীচে নামাবেন!