সরল বিশ্বাস
রাজনীতির লোকদের অনেক চাপ নিতে হয়। সৌরভ রাজনীতির লোক নয়। তাই এসব চাপ নেওয়া ওর অভ্যেস নেই।
সৌরভ অসুস্থ হওয়ার দিন এমনই একটি মন্তব্য করেছিলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র দিন কয়েক আগে সৌরভের বাড়িতে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে আসেন। রবিবার দু’দফায় হাসপাতালেও আসেন। একবার একা। বিকেলের দিকে নিয়ে আসেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে।
রবিবার তুলে দিলেন মোক্ষম একটি বিতর্ক। সৌরভের ওপর নানাভাবে চাপ তৈরি করা হচ্ছে। তাই তিনি অসুস্থ।
এদিকে, অশোকবাবু নিজের মতটাও পরিষ্কার জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, সৌরভকে তিনি রাজনীতিতে দেখতে চান না। সৌরভ যেন শুধু খেলাধূলা নিয়েই থাকেন। এই ব্যাপারটা সৌরভকে তিনি বারবার জানিয়েছেন।
বিজেপির দিক থেকে হয়ত রাজনীতিতে আসার চাপ আছে। কিন্তু অশোকবাবু মেনে নিলেন, তিনি সৌরভকে জানিয়েছেন, সৌরভ যেন রাজনীতিতে না আসেন। এটাও কি একধরণের পাল্টা চাপ নয়!
সৌরভ রাজনীতিতে আসতে পারেন, এই জল্পনা অনেকদিনের। সেই জল্পনার যথেষ্ট ভিত্তিও আছে। এটা জানার পর তৃণমূলের দিক থেকে সৌরভকে আটকানোর কোনও চেষ্টা হয়নি, এটাও কি বিশ্বাসযোগ্য! অমিত শাহ কারও বাড়িতে খেতে গেলে তৃণমূল নেতারা তাঁর বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। দলের পতাকা ধরিয়ে দিচ্ছেন। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় হাজির করছেন। তাঁরা সৌরভের ক্ষেত্রে একেবারে চুপচাপ বসে আছেন, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। আবার অশোকবাবুও দলের অনুমোদন ছাড়া সৌরভের কাছে যাচ্ছেন, এমনটা নয়। তিনিও পইপই করে বলে আসছেন, রাজনীতিতে এসো না।
অর্থাৎ, সৌরভের কাছে চাপটা দ্বিমুখী। একদল বলছে, এসো। একদল বলছে, যেও না। বেচারা সৌরভ! কার কথা রাখবেন!
এবার সেই প্রথম প্রসঙ্গ। সৌরভের নাকি চাপ নেওয়ার অভ্যেস নেই। অশোকবাবুরা নাকি চাপ নিতে অভ্যস্থ। কার সম্পর্কে কী বলছেন? একটা কঠিন সময়ে সৌরভ ভারতের ক্রিকেট দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজে বিদেশ সফর করছেন। বিশ্বকাপে দলকে ফাইনালে তুলেছেন। বিশ্বের সেরা বোলারদের দাপটের সঙ্গে খেলেছেন। এ তো গেল মাঠের ভেতরের চাপ। নিজের দল নিয়ে চাপ কি কম? দলে শচীন তেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, অনিল কুম্বলের মতো তারকারা যেমন ছিলেন, তেমনি হরভজন, যুবরাজদের মতো দস্যি–দামালরাও ছিলেন। তাঁদের হ্যান্ডল করা খুব সহজ ছিল! শচীনকে ১৯৪ রানের মাথায় তুলে নেওয়া কি সহজ ছিল? রাহুলকে দিয়ে উইকেট কিপিং করানো কি সহজ ছিল? বিশ্বকাপ ফাইনালে কুম্বলেকে বসিয়ে হরভজনকে খেলানো কি সহজ ছিল? কোনওটাই সহজ ছিল না। কিন্তু তিনি করে দেখিয়েছেন।
এর বাইরেও একসঙ্গে কতদিক সামলাতে হয়েছে। এত এত নির্বাচককে দাপটের সঙ্গে সামলেছেন। দল নিয়ে ঝগড়া করেছেন। কোচ, ম্যানেজারদের সামলেছেন। প্রভাবশালী বোর্ডকর্তাদের সামলেছেন। মিডিয়াকেও দারুণভাবে সামলেছেন। এমনকী হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও কি কম চাপ সামলাতে হচ্ছে! যে পারছেন, দেখতে চলে আসছেন। নানারকম ‘জ্ঞান’ দিয়ে যাচ্ছেন। অর্বাচীনের মতো চাপ বাড়িয়ে যাচ্ছেন। সেটাও হাসিমুখে দিব্যি সামলাচ্ছেন। কেবিনে ডোনা, বাইরে বৈশালি। এই দ্বিমুখী চাপ সামলানোও কিন্তু খুব সহজ ব্যাপার নয়।
এর দশভাগ চাপ কখনও অশোকবাবুদের সামলাতে হয়েছে!