অজয় কুমার
মঙ্গলবার রাত থেকেই ফের জোর জল্পনা, শুভেন্দু অধিকারী নাকি তৃণমূলেই থেকে যাচ্ছেন। তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠক নাকি বেশ ফলপ্রসূ। শুভেন্দুর ক্ষোভ নাকি মিটে গেছে।
মিডিয়া যেমন দাবি করছে, ব্যাপারটা এত সহজ সরল বলে মনে হচ্ছে। বৈঠক হয়েছে, এটা ঘটনা। বৈঠকে বিশেষ তিক্ততা হয়নি, এটাও ঘটনা। কিন্তু তার মানে সমস্যা মিটে গেল, সেই সিদ্ধান্তে আসার মতো সময় বোধ হয় এখনও আসেনি।
সৌগত রায় রয়েছেন মধ্যস্থতার দায়িত্বে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আলাপ–আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি যে তৃণমূলে শুভেন্দুকে ধরে রাখার ব্যাপারে দারুণ আশাবাদী, ক্যামেরার সামনে বারবার এমনটাই জানিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও শুভেন্দু সমান্তরাল কর্মসূচি চালিয়ে গেছেন। তারপরেও মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সুতরাং, সৌগতবাবু আশাবাদী হতেই পারেন। কিন্তু সেই দাবির গুরুত্ব কতটা, তা সময় বলবে।
কারও সঙ্গে কথা না বলেই শুভেন্দু দিনের পর দিন বিকল্প কর্মসূচি নিয়ে চলেছেন, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। নিশ্চিতভাবেই দিল্লির সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়েছে, কথা চলছে। দল ছাড়ার ব্যাপারে তিনি হয়ত অনেকটাই এগিয়ে গেছেন। সেখান থেকে ফিরে আসার পথটা মসৃণ হবে না।
বিভিন্ন জেলায় শুভেন্দুর অনুগামীরা নানা পোটার সাঁটিয়েছেন। কারা তাঁর অনুগামী, তাও মোটামুটি অনেকটাই পরিষ্কার। এখন শুভেন্দু যদি তৃণমূলে থেকেও যান, সেই অনুগামীদের কী হবে? তাঁদের ঠিকঠাক পুনর্বাসন হবে তো? তাঁদের অনেকে বিজেপিমুখী হয়েই গেছেন। তাঁদের আবার তৃণমূলের মূলস্রোতে ফেরানো যাবে তো?
এখন তৃণমূলের দিক থেকে নানা রকম আশ্বাস থাকবে। হয়ত রাজ্য সভাপতি হওয়ার টোপ দেওয়া হতে পারে। হয়ত উপ মুখ্যমন্ত্রীর টোপও দেওয়া হতে পারে। এখন তৃণমূল নিতান্তই বিপাকে। তাই নমনীয় হতে হয়েছে। কিন্তু তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসে গেলে তখন যে শুভেন্দুর ওপর বদলার রাজনীতি শুরু হবে, এটা শুভেন্দু নিজেও বোঝেন। তখন যদি লাগাতার উপেক্ষা করা হয়, শুভেন্দুর কিছুই করার থাকবে না। তখন কোথায় যাবেন? যাওয়ারও জায়গা থাকবে না। সেই গুরুত্বও থাকবে না।
বৈঠকে কারা ছিলেন? অভিষেক ব্যানার্জি, প্রশান্ত কিশোর, সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪:১। একদিকে চারজন, একদিকে একজন। এই অবস্থায় যাঁর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, তাঁর সামনে সেটা বলা সম্ভব নয়। অভিষেকের বিরুদ্ধে তাঁর কী কী অভিযোগ, তা নিশ্চয় শুভেন্দু অভিষেকের সামনে বলে তিক্ততা বাড়াতে চাননি। তার মানে এই নয় যে তিনি দলে সন্ধিপ্রস্তাব মেনে নিয়েছেন।
মেদিনীপুরের জনসভাতেই বোঝা যাবে। সেদিন যদি তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে হাজির থাকেন, তাহলে একরকম। কিন্তু যদি না থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে, এই বৈঠক থেকে কোনও সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসেনি।