হেমন্ত রায়
যেভাবেই হোক, বিজেপির পালে হাওয়া দেওয়া যেন শাসকদলের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই হঠকারী কাজটাই তাঁদের আরও কঠিন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
শাসক দল কর্মসূচি নেয়। সেই অনুযায়ী বিরোধী দল তাদের কর্মসূচি ঠিক করে। গণতন্ত্রে এমনটা হতেই পারে। কিন্তু এখানে একেবারেই উল্টো নিয়মে চলছে তৃণমূল। বিরোধীরা কী কর্মসূচি নিচ্ছে, সেই অনুযায়ী শাসক দল তাদের কর্মসূচি ঠিক করছে। কে যে কাকে অনুসরণ করছে!
শাসকদলের নেতা–মন্ত্রীরা গেলে বিরোধীরা অনেক সময় বিক্ষোভ দেখায় বা কালো পতাকা দেখায়। এখানেও উল্টো নিয়মে চলছে তৃণমূল। বিজেপি নেতারা গেলে স্থানীয় তৃণমূলের কাজ হচ্ছে বিক্ষোভ দেখানো, ঢিল ছোঁড়া, কালো পতাকা দেখানো। এতে যে বিরোধীদের কর্মসূচি বেশি মাইলেজ পেয়ে যায়, এই সহজ বোধবুদ্ধিটুকুও যেন কালীঘাটের আদিগঙ্গায় বিসর্জন দিয়েছে শাসক দল।
আবার একই ঘটনা ঘটল ডুয়ার্সের জয়গাঁয়। সেখানে একটি সমাবেশে গিয়েছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সারা দিনে এমন অনেক জায়গায় তিনি যান, সভা করেন। কটা সভার কথা কাগজে বেরোয়! টিভিতেই বা কটা দেখানো হয়! কিন্তু এবার কিছু লোক রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে রইলেন দিলীপ ঘোষকে কালো পতাকা দেখাবেন বলে। এখানেই শেষ নয়। তাঁর গাড়ি দেখেই ইট ছুঁড়তে শুরু করলেন। তাঁর গাড়ি তো বটেই, বিধায়ক উইলসন চম্প্রমারির গাড়িও ভেঙে গেল। টিভিতে সারাদিন ধরে সেটাই দেখানো হল। দিলীপ ঘোষের যে সভার কথা কেউ জানতেন না, তাঁরাও জেনে গেলেন তৃণমূলের সৌজন্যে।
তৃণমূল নেতারা স্বাভাবিকভাবেই বলতে শুরু করেছেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। আমরা হিংসায় বিশ্বাস করি না।’ কেউ বলছেন, ‘এটা স্থানীয় মানুষের জনরোষ। বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।’ কেউ কেউ বলছেন, ‘এটা বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব। প্রচারে আসার জন্যই ওরা এইসব করছে।’ এইসব কথাগুলো শুনে শুনে সত্যিই কান পচে গেছে। যেটা সাদা চোখে দেখা যাচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে, সেখানে এমন আবোল তাবোল না বকলেই নয়! দায়িত্বশীল নেতা, মন্ত্রী, বিধায়কদের ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে বলতেই হবে! মিথ্যে বলাটা যেন দৈনন্দিন রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বলা যেতেই পারত, আমরা এই ঘটনা সমর্থন করি না, যারা করেছেন, অন্যায় করেছেন। এটা বললে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত! বরং দলের ভাবমূর্তি কিছুটা ভালই হত। যদি সেইসব লোকেদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করা হত, প্রশাসনের ও শাসকদলের ভাবমূর্তি কিছুটা উজ্জ্বলই হত। ভবিষ্যতেও অত্যুৎসাহীরা এরকম করার সাহস পেত না। কিন্তু যাঁরা এইসব ঢিল ছুঁড়ছে, তারা জানে, দলে তাদের আড়াল করবে। এমনকী বাহবাও দিতে পারে। পুলিশও তাদের কিচ্ছু করবে না। এমন ‘আশ্বাস’ পেয়ে গেলে এই লোকেরা তো বেপরোয়া হবেই।
আজ যাদের ঢিল ছুঁড়তে শেখানো হচ্ছে, তারা একদিন এই নেতাদের গাড়িতেই ঢিল ছুঁড়বে না তো! কথায় আছে, বিনাশকালে বিপরীত বুদ্ধি। তৃণমূলকে দেখে বারবার সেই প্রবাদটাই মনে পড়ে যাচ্ছে। একটা অপ্রাসঙ্গিক সভাকে প্রাসঙ্গিক করে তোলার যাবতীয় দায়িত্ব তাঁরা নিয়ে বসে আছেন। লাভটা কার হচ্ছে! ক্ষতিটাই বা কার হচ্ছে! এটা যখন বুঝবেন, তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে।