ধীমান সাহা
সময়টাই খারাপ যাচ্ছে। বেচারাম মান্নাও কিনা ব্ল্যাকমেল করছেন। তাও আবার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁকেও কিনা ফোন করে রাগ ভাঙাতে হচ্ছে!
সিঙ্গুরে মাস্টারমশাই বনাম বেচারামের লড়াই নতুন কিছু নয়। কঠিন সময়েও জিতে এসেছেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের মতো মানুষেরা। সিঙ্গুর আন্দোলন বললে যে কয়েকটা স্থানীয় মুখ ভেসে ওঠে, তাঁদের মধ্যে সামনের সারিতেই থাকবেন সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই। কিন্তু দল ক্ষমতায় এলে এইসব মানুষের প্রয়োজন বোধ হয় ফুরিয়ে যায়। প্রথমে শিক্ষামন্ত্রী করা হলেও দ্রুত সেখান থেকে গুরুত্বহীন মন্ত্রকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরেরবার তো আর মন্ত্রীই করা হয়নি।
অন্যদিকে বেচারাম। প্রথম সরকারে মন্ত্রিসভায় আনা হলেও দ্বিতীয় দফায় তিনিও স্রেফ বিধায়ক। তাও আবার হরিপালের। একবার মন্ত্রীত্বের স্বাদ পেয়ে গেলে তারপর বিধায়ক থাকলেও নিজেকে বঞ্চিতই মনে হয়। বেচারামেরও সেই অবস্থা। এবার তিনি নাকি হরিপাল ছেড়ে সিঙ্গুরে দাঁড়াতে চান। তাছাড়া, স্থানীয় স্তরে কার অনুগামী কোথায় বসবেন, তা নিয়ে খুচখাচ ঝগড়া তো বারো মাস লেগেই থাকে। কে পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ হবেন, কে প্রধান হবেন, কে দলের অঞ্চল সভাপতি হবেন, এই ঝগড়া যাওয়ার নয়।
কিন্তু এবার ফের মাস্টারমশাইয়ের গোঁসা হয়েছে। তিনি নাকি দলবদলের কথাও ভাবছেন। একে শুভেন্দুকে নিয়ে ত্রাহি ত্রাহি রব। তার ওপর যদি মাস্টারমশাইরা চলে যান, তাহলে কী বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তা সহজেই বোঝা যায়। মাস্টারমশাইয়ের দারুণ জনভিত্তি হয়ত নেই। কিন্তু রাজ্যের মানুষ পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির তৃণমূল নেতা বলতে যে গুটিকয় লোককে বোঝেন, তাঁদের মধ্যে মাস্টারমশাই অন্যতম। এমন লোক দল ছাড়তে চাইলে বিজেপি লুফে নেবে। তখন মাস্টারমশাইও সিঙ্গুর আন্দোলনের অনেক গোপন কথা সামনে এনে ফেলতে পারেন।
তাই বেচারামকে একটু ধমক দেওয়া দরকার ছিল। যদি মাস্টারমশাইয়ের রাগ পড়ে। কিন্তু হল উল্টো। ধমকের ওভারডোজ হয়ে গেল। ‘অপমানিত’ বেচারাম ছুটলেন সোজা বিধানসভায়। স্পিকারকে ধরিয়ে দিলেন ইস্তফাপত্র। বেচারা স্পিকার সাহেব। ইস্তফা নেওয়ারও ক্ষমতা নেই। ফিরিয়ে দেওয়ারও ক্ষমতা নেই। নেত্রী কী চান, সেটা বুঝেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাই ইস্তফাপত্র পেয়েছি, এটাও বলা যাবে না। পাইনি, তাও বলা যাবে না।
চ্যানেলে ছড়িয়ে গেল বেচারামের পদত্যাগের খবর। যদি বেচারাম সত্যিই চলে যান! মাস্টারমশাইয়ের যদিও সংযম–টংযম থাকে, বেচাবাবুর তো সেটুকুও থাকবে না। কী বলতে কী বলে ফেলবেন, কে জানে! অতএব, তাঁকেও ঠান্ডা করা দরকার। ফের আসরে নামতে হল নেত্রীকে। বাবা–বাছা করে এ যাত্রায় হয়ত বেচারামের মানভঞ্জন করা গেল।
তাহলে, কী বোঝা গেল! ১) নেত্রীর ধমক আর শিরোধার্য নয়। প্রয়োজনে ফোঁস করে উঠতে বেচারামও জানেন। ২) যে যতই আদর্শের কথা বলুন, টিকিট দেব না বললেই সঙ্গ ছাড়তে দ্বিধা করেন না বেচারামরা। ৩) অন্য সময় হলে বেচারামের রাগ ভাঙানোর কোনও চেষ্টাই নেত্রী করতেন না। স্রেফ উপেক্ষা করতেন। কিন্তু এখন বেচারামেরও রাগ ভাঙাতে হচ্ছে। ৪) ইস্তফা গ্রহণ বা বর্জন, কোনওটাই স্পিকারের হাতে নেই। তাঁকে তাকিয়ে থাকতে হবে সেই দলের হুকুমের দিকেই। ৫) অনেকেই তো বেরিয়ে গেছেন। এটা–সেটা অভিযোগও এনেছেন। কিন্তু বেচারাম বেরিয়ে গেলে কোন গোপন কথা ফাঁস করতেন!