বোকা বোকা সেলফি দেখলে লাইক মারা বন্ধ করুন। ওই লাইকগুলোই তাদের আরও বোকা বানিয়ে দিচ্ছে। যদি আপনি লাইক মেরে থাকেন, তাহলে জানবেন, সেই বোকামির ভাগীদার আপনিও। লিখেছেন তৃষাণ সেনগুপ্ত।।
সেলফি তুললে আপনাকে খুব বাজে লাগে। কখনও এই কথাটা কেউ আপনাকে বলেছে? বলেনি? তাহলে জেনে রাখুন, আপনার ভাল বন্ধুর বড়ই অভাব।
অথচ, সেলফি তোলার কী তীব্র আকাঙ্ক্ষা! বেড়াতে গেলে তো কথাই নেই। চা খেলে সেলফি। বাসে বসে সেলফি। ট্রেনে বসে সেলফি। এক্ষুনি সেটা সাঁটিয়ে দিতে হবে ফেসবুকের ওয়ালে। তারপর অপেক্ষা করো, কটা লাইক আসে। কী কী কমেন্ট আসে। এটা যে কী মারাত্মক রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে!
কারও ইচ্ছে হল, চলন্ত ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে সেলফি তুলবে। কেউ সেলফি তুলছে ছাদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে। যেন বিরাট এক বীরত্ব। অন্য কোথাও বীরত্ব ফলানোর জায়গা নেই। তাই ট্রেনে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলো। ধন্যি লোকজনের রুচি। এগুলোতে লাইক মারার লোকও জুটে যায়! কেউ মনে করিয়ে দেয় না, এই সেলফির মধ্যে মোটেই কোনও বাহাদুরি নেই। যদি মনে করিয়ে দিত, তাহলে হয়ত ছেলেটি এভাবে সেলফি তুলত না। মাঝে মাঝেই কাগজে খবর বেরোয়, সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত যুবক। এর পরেও আমাদের শিক্ষা হয় না। আমরা ডজন ডজন সেলফি তুলব, আর ফেসবুক ওয়ালে খাঁচিয়ে যাব। কেউ বিকট সেজে আছে। একেবারেই বিচ্ছিরি লাগছে। কিন্তু কী আশ্চর্য, সেই ছবিতেও শ খানেক লাইক পড়ে যায়। সে মিনিটে মিনিটে দেখছে, কটা লাইক পড়ল। আর এই লাইক দেখে সে ভেবে নিল, তাকে বোধ হয় সত্যিই দারুণ দেখাচ্ছে। ফলে, বিকট সাজা বা বিকট অঙ্গভঙ্গির সেলফি আরও বেড়ে গেল।
ভাল ছবি কোনগুলো? যে কোনও প্রদর্শনীতে যেন। সেজেগুজে পোজ দেওয়া ছবি কজন ফটোগ্রাফার তাঁর প্রদর্শনীতে রাখেন? মানুষের ছবি থাকলেও সেগুলো তাঁদের না জানিয়ে তোলা। জানিয়ে ছবি তুললেই চোখমুখে একটা অদ্ভুত আড়ষ্টতা এসে যায়। একটা কৃত্রিমতা এসে যায়। যা একটা সুন্দর ছবিকে নষ্ট করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। আপনার যত ছবি আছে, তার মধ্যে সেরা কোনগুলো? একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন। যেগুলো আপনাকে না জানিয়ে তোলা হয়েছে, সেগুলোই ন্যাচারাল ছবি হয়েছে। আর যেগুলো জানিয়ে তোলা হয়েছে, যেগুলোতে আপনি পোজ দিয়েছেন, তার মধ্যে কেমন একটা দেখনদারি ব্যাপার আছে।
ফেসবুকে সেলফিগুলোতে একবার চোখ বোলান। কেমন একটা বোকা বোকা ব্যাপার। তাদের পোস্টগুলো পড়ুন। অধিকাংশক্ষেত্রেই বানান ভুল, একটা বাংলা বা ইংরাজি বাক্যও ঠিকঠাক লিখতে পারছে না। বুদ্ধির ছাপ খুবই কম। সুস্থ রুচিরও বড়ই অভাব। কাউকে ব্যক্তিগতভাবে ছোট করার ইচ্ছে নয়। কিন্তু অনেক প্রোফাইল দেখে সাধারণভাবে যেটা মনে হয়েছে, সেটাই বললাম। কেউ আঘাত পেলে মার্জনা চেয়ে নিচ্ছি। যাঁরা একটা দুটো তুলেছেন, তাঁদের কথা বলছি না। কিন্তু যাঁরা দিনে তিরিশ–চল্লিশটা সেলফি তোলেন, তাঁরা ভেবে দেখুন, সেলফিতে সত্যিই কি আপনাকে খুব সুন্দর লাগে? একটা সুন্দর চেহারাকে অসুন্দর দেখানোর আদর্শ উপায় হল এই সেলফি।
তাই যদি নিজেকে ভালবাসেন, তাহলে সেলফি থেকে দূরে থাকুন। প্রিয়জন যদি সেলফি তোলে, যদি মনে হয়, তাকে ভাল লাগছে না, দয়া করে এই সত্যিটা তাকে জানান। প্রকাশ্যে কমেন্ট বক্সে জানাবেন না। প্রাইভেট মেসেজে তো জানাতে পারেন।
শুধু সেলফি অ্যাডিক্টেডদের দায়ী করে লাভ নেই। এর দায় আমার, আপনার সকলের। আমরাই তো সেলফি দেখে লাইক মারি। আমরাই তো বোকামিকে উৎসাহিত করি। এই লাইকগুলোই তাদের আরও বিপথগামী করে তুলছে। তাই আমাদেরও বোধ হয় লাইক মারার আগে কিছুটা সংযম দেখানো জরুরি।