(এতদিন পালিয়ে বেড়িয়েছেন। এখান সেখানে লুকিয়ে থেকেছেন। এখন প্রকাশ্যে বিমল গুরুং। সেখান থেকেই যদি বিনয় তামাংকে চিঠি লিখতেন! কী থাকত সেই চিঠিতে! কাল্পনিক এক খসড়া তৈরি করলেন সরল বিশ্বাস)
বিনয় ভাই,
এখন আর গোপন ডেরায় নেই। একেবারে পাঁচতারা আতিথেয়তায় আছি। কোথায় আছি, কী করছি, পুলিশ সব জানে। ভাবতে অবাক লাগে, গত তিন বছর পুলিশের ভয়ে এখান–সেখানে লুকিয়ে বেড়িয়েছি। তিন বছর পাহাড়ছাড়া, রাজ্যছাড়া। এখন যখন খুশি পাঁচতারা হোটেলে প্রেস কনফারেন্স করছি। টিভিতে লাইভ দেখাচ্ছে।
হঠাৎ করে বেরিয়ে আসছি, এমন তো নয়। সব রিপোর্টার জানে, পুলিশ জানে না, এটা হতে পারে! জানে, জানে। সব জানে। কারা আমাকে দিয়ে এসব করাচ্ছে, সেটা তুমিও ভালই জানো। তাই তড়িঘড়ি পাহাড় থেকে গুটিগুটি পায়ে নবান্নে ছুটে এসেছো। মুখে বলছ, আমি নাকি ক্লোজড চ্যাপ্টার। আমি নাকি পাহাড়ের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক। বলি, আমি যদি এতই অপ্রাসঙ্গিক হই, তাহলে পাহাড়ে আমার বিরুদ্ধে মিছিল বের করতে হচ্ছে কেন? তড়িঘড়ি নিজেদের চেয়ার বাঁচাতে নবান্নেই বা ছুটে আসতে হল কেন?
তুমি ভেবে নিয়েছিলে, আমি পাহাড়ছাড়া। তাই তুমিই পাহাড়ের সম্রাট হবে। এত সহজ নয় বন্ধু। লোকসভায় কী হল, মনে নেই! একেবারে চার লাখ ভোটে হার! রাজ্যে সবথেকে বেশি ব্যবধানে তৃণমূল হেরেছে এই দার্জিলিঙেই। বিধানসভার উপনির্বাচন। সেখানে তুমি নিজে দাঁড়ালে। ভাবলে, জিতলেই পার্বত্য উন্নয়ন মন্ত্রী হবে। হায় রে! হারলে একেবারে চল্লিশ হাজার ভোটে! পাহাড়ের লোকের কাছে তোমার গুরুত্ব যে এত কম, আমি নিজেও বুঝতে পারিনি। জানতাম, পাহাড়ে তৃণমূল হারবে। কিন্তু চার লাখ ভোটে হারবে! বিশ্বাস করো, আমি নিজেও ভাবতে পারিনি।
মোদ্দা কথা হল, মুখ্যমন্ত্রী বুঝে গেছেন, তোমাকে দিয়ে কিস্যু হবে না। বেড়ালকে গ্যাস খাইয়ে বাঘ বানানো যায় না। তোমার ভরসায় থাকলে পাহাড়, ডুয়ার্সে আরও ভরাডুবি হবে। তাই ঠেলায় পড়েই আমার কথা মনে পড়েছে। এক সময় এই পাহাড় আমার হুকুমে উঠত–বসত। আমি চাইলেই পাহাড় অচল হয়ে যেত। সেই আমি, তিন বছর পাহাড় ছাড়া। এভাবে লুকিয়ে থাকতে কারও ভাল লাগে! তাছাড়া, মাথার ওপর শ দেড়েক মামলা। যা পেরেছে, মামলা দিয়ে দিয়েছে। তাই আমিও অপেক্ষায় ছিলাম। হ্যাঁ, আমার ফেরার তাগিদ ছিল। তিনিও সেই সুযোগটা নিলেন।
হঠাৎ করে আমি কলকাতায় উদয় হলাম, প্রেস কনফারেন্স করে ফেললাম! তুমিও কি এই আজগুবি গল্পে বিশ্বাস করো? মুখ্যমন্ত্রী কিছুই জানতেন না! তুমি বিশ্বাস করো! সবই সাজানো চিত্রনাট্য বন্ধু। এখন সবটা বলছি না। সময় আসুক, সব জানতে পারবে। দুজনেরই দুজনকে দরকার। আমার পাহাড়ে ফেরা দরকার। তাঁরও হয়ত আমাকে দরকার। সহজ বোঝাপড়া। এতদিন আমার জামিন নাকচের জন্য পুলিশ, সরকারি আইনজীবীরা আদাজল খেয়ে লেগেছিলেন। এবার দেখো, আস্তে আস্তে ছবিটা বদলে যাবে। সেই পুলিশ আমাকে পাহারা দেবে, স্যালুট করবে। হয়ত একের পর এক মামলাও তুলে নেওয়া হবে।
যাক সেসব কথা। তড়িঘড়ি নবান্নে ছুটে এলে। তোমাদের ছবিটা দেখে সত্যিই করুনা হচ্ছিল। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিংয়ের নামে কত দূরে তোমাদের বসানো হল! মুখ্যসচিব তো পাশেই ছিলেন। তাহলে তোমরা এত দূরে কেন? তোমাদের বুঝি করোনা হয়েছিল! আসলে, ওই ছবিটাই বলে দিল, তোমাদের জায়গাটা এখন ঠিক কোথায়। একেবারে দেওয়ালের শেষপ্রান্তে।
আমাকে নিয়ে নাকি কোনও কথা হয়নি। পাগলেও বিশ্বাস করবে! আমাকে নিয়ে তোমরা চিন্তিত বলেই তো ছুটে এসেছো। আমি যাতে পাহাড়ে ফিরতে না পারি, সেই ব্যবস্থা করতে চেয়েছো। মিছিল করে চাপ তৈরির চেষ্টা করেছ। কোনও লাভ হল! যতই মিছিল করো, ওই মিছিলের দৌড় কতদূর, সেটা এতদিনে নবান্ন জেনে গেছে। তোমাদের রাগকে তিনি থোড়াই কেয়ার করেন। তিনি চেষ্টা করছেন দুদিকটা ব্যালেন্স করার। দুই শিবিরকেই হাতে রাখার। তোমাদের জিটিএ বা এটা ওটা ললিপপ দিয়ে ভুলিয়ে রাখা হবে। এতেই তোমরা সন্তুষ্ট থেকো। এর বেশি আশা করতে যেও না। এখন যদি মুখ্যমন্ত্রীকে পছন্দ বেছে নিতে বলা হয়, তিনি আমাকেই বেছে নেবেন। তোমরা রবে নিষ্ফলের, হতাশের দলে। শেষমেষ তোমাদের হয়ত বিজেপির ছাতার তলায় যেতে হবে। এতদিন যে মুখ্যমন্ত্রীর লেজুড়বৃত্তি করেছো, তখন হয়ত তাঁর সমালোচনা করতে হবে।
শুনে রাখো বন্ধু, আমি পাহাড়ে উঠছি। হয়ত দীপাবলির পরেই। তোমরা যেমন মিছিল, জমায়েত করেছিলেন, আমিও মিছিল–জমায়েত করে তোমাদের বুঝিয়ে দেব, এখনও পাহাড়ে আমার শক্তি কতখানি। যারা তোমার দলে ভিড় করেছিল, এক এক করে সবাই ফিরে আসবে। যে পুলিশ শ দেড়েক কেস দিয়েছিল, তারাই আবার স্যালুট করবে। তোমার আক্ষেপ ছাড়া কিছুই করার নেই।
যদি সরকার উল্টে যায়, আমার বিজেপিতে যেতে একমাসও লাগবে না। সেই দরজাও খোলাই আছে। সুতরাং, তুমি ওখানে গিয়েও বিশেষ সুবিধা করতে পারবে না। ওখানেও আমি গেলে তোমার মাথার ওপরই বসব। কী ভাবছ? পাশা চিরদিন একরকম থাকে না। সময় সময় পাল্টে যায়। তোমার সময় ছিল। এখন আবার আমার সময়। একে একে সবাই ফিরে আসবে। তুমিও ফিরে এসো। আগাম আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখলাম।
বিমল দাজু