রূপায়ণ বিশ্বাস
এ যেন একেবারেই অচেনা এক দার্জিলিং। শৈলরানীকে এত ফাঁকা কখনও দেখেছি বলে মনে পড়ছে না।
এর আগে অন্তত বার দশেক দার্জিলিঙে এসেছি। কখনও কখনও তো মনে হত যেন ধর্মতলায় হাঁটছি। চারিদিকে এত বাংলা কথার কচকচানি বোধ হয় নন্দন চত্বরেও শোনা যায় না।
লকডাউনের জেরে ছমাসেরও বেশি সময় কার্যত গৃহবন্দি। এমনিতে বছরে দুবার করে বেড়ানো বহুদিনের অভ্যেস। এতবার বেড়াতে না গেলে হয়ত গাড়ি কিনতে পারতাম, ফ্ল্যাট নিতে পারতাম। বন্ধুরা, আত্মীয়েরা এমন অভিযোগ করেই থাকে। তারা অবশ্য মিথ্যে বলে না। কী করি বলুন, একেকজনের একেক নেশা থাকে। আমার না হয় ঘোরার নেশা।
তবে, আমি অবশ্য পুজোর সময় কোথাও যাওয়ার পক্ষপাতি নই। পুজোয় নিজের চেনা জায়গাই ভাল। তখন বেড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না। তবে দুর্গাপুজো আর কালীপুজোর মাঝের সময়টায় চেষ্টা করি কোথাও একটা যেতে। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। কোথায় আর যাই। প্রথমেই যে নামটা মাথায় আসে, তা হল দার্জিলিং।
অন্যান্য ট্রেন বন্ধ। তবে পদাতিক এক্সপ্রেস চলছে। এনজেপিতে নেমে দার্জিলিংয়ের গাড়ি পেতেও সমস্যা হল না। হোটেলটা ম্যাল থেকে একটু দূরে। কখন ম্যালে ছুটে যাব, গাড়িতে ওঠা থেকেই সেই অপেক্ষা। ম্যালে এসে দেখলাম, চেনাই যায় না। কতদিনের স্তব্ধতা যেন একটু একটু করে ভাঙছে। আমার চেনা দার্জিলিং যেন একটু একটু করে জড়তা ভেঙে উঠে দাঁড়াচ্ছে।
এরই মধ্যে নতুন উৎপাত। আগেই শুনে এসেছি, বিমল গুরুং মঞ্চে অবতীর্ণ হয়েছেন। তিনি নাকি আবার পাহাড়ে ফিরতে চান। কার নির্দেশে তিনি আবার প্রকাশ্যে এলেন, সেটা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এখন গুরুংকে ফেরাতে চাইলে বাকিরা মানবে কেন? তারাও দেখলাম, মিছিল বের করে দিয়েছে, গুরুংকে পাহাড়ে ফিরতে দেব না।
বোঝা গেল, পাহাড়ে আবার সেই অশান্তি ফিরে আসতে পারে। গুরুং আবার ফিরে আসবেন কিনা জানি না। পাহাড়ে শক্ত মাটি পাবেন কিনা, তাও জানি না। তবে আবার অশান্তির আবহ যে তৈরি হচ্ছে, এটুকু বুঝলাম। এমনিতেই গত ছ মাসে পর্যটকের দেখা নেই। তার ওপর আবার গুরুংকে ফিরিয়ে এনে যদি অশান্তির ইন্ধন জোগানো হয়, আখেরে ক্ষতি হবে পাহাড়ের পর্যটনের।