‌একটি কারণেই বাকিদের থেকে অনেক এগিয়ে নীতীশ

সাফল্য যেমন আছে, তেমনি ব্যর্থতাও আছে। কিন্তু বিহারের পরিচিতি অনেকটাই বদলে দিয়েছেন নীতীশ কুমার। অন্তত একটি ব্যাপারে তিনি বাকি মুখ্যমন্ত্রীদের অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছেন। যদি হেরেও যান, অন্তত মদ নিষিদ্ধ করার সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য তাঁকে কুর্নিশ জানাতেই হবে। লিখেছেন অজয় কুমার।

রাজনীতিতে পালাবদল হয়েই থাকে। আজ এই দলের সরকার, তো কাল অন্য দলের সরকার। ইদানীং দলবদলও হামেশাই ঘটছে। আজ যিনি এই দলের, কাল নিমেশে তিনি জার্সি বদল করে অন্য দলে চলে যাচ্ছেন। আজ যেসব বলছেন, কাল তার উল্টো কথা বলে চলেছেন। আজ রাহুল গান্ধী খুব ভাল, অমনি কাল খুব খারাপ। আজ মমতা ব্যানার্জি খুব খারাপ, অমনি কাল তাঁর ‘‌অনুপ্রেরণা’‌র শেখানো বুলি আওড়ে চলেছেন। এইসব কারণে চলতি রাজনৈতিক দলগুলি সম্পর্কে অনেকটা আস্থা হারিয়েছি। এই সারসত্যটুকু বুঝেছি, এদের নিজেদের কোনও নীতি বা আদর্শ নেই। ক্ষমতায় থাকার জন্য যা যা করতে হয়, এঁরা ঠিক সেটাই করেন। কোনও দল কম, কোনও দল বেশি।

nitish kumar

তবে কিছু কিছু লোকের কিছু কিছু কাজ মনে ছাপ ফেলে যায়। গত কয়েক বছরে নীতীশ কুমারের তেমনই একটা কাজ আমার মনে ছাপ ফেলে গেছে। সেটা হল মদ নিষিদ্ধ করা। অনেকে হয়ত বলবেন, সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হলেও ব্ল্যাকে পাওয়া যাচ্ছে। মোদ্দা কথা হল, সরকার এতবড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস দেখিয়েছে। শুধু তাই নয়, পাঁচ বছর ধরে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি। রাজস্বে ক্ষতি হয়েছে। উন্নয়ন হয়ত কিছুটা বাধা পেয়েছে। কিন্তু তারপরেও নিজের সিদ্ধান্তে অনঢ় থেকেছেন নীতীশ কুমার। এটা কিন্তু খুব সহজ কথা নয়।

alcohol

বিহারে নির্বাচন পর্ব চলছে। কী ফল হবে, জানি না। জেডিইউ–‌এর সঙ্গে আমার কস্মিনকালেও কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু ব্যক্তি নীতীশ কুমার সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা আছে। আর দশজন মুখ্যমন্ত্রীর থেকে তিনি অনেকটাই আলাদা। তাঁর আমলে বিহারের সাফল্য কম নেই। গুন্ডারাজ অনেকটাই কমেছে। দুর্নীতির জন্য যে বিহারের বিশেষ ‘‌সুনাম’‌ ছিল, সেই বিহার অনেকটাই বদলে গেছে। উন্নয়নের চেহারাটা আগের তুলনায় ভাল। এরপরেও বিরোধীদের নিশ্চয় কিছু অভিযোগ থাকবে। হয়ত, যতটা উন্নয়ন হওয়ার ছিল, ততটা হয়নি। কিন্তু অন্য কেউ থাকলে এর থেকে বেশি হত, এমনটাও বিশ্বাস করি না।

সবথেকে বড় সিদ্ধান্ত অবশ্যই মদ নিষিদ্ধ করা। বর্তমান আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে এটা অত্যন্ত জরুরি একটা সিদ্ধান্ত। গ্রামের জনজীবনে মদ যে কী মারাত্মক ক্ষতিকর ভূমিকা পালন করে, তা শহুরে লোকেরা বুঝতেও পারেন না। একের পর এক প্রজন্ম শেষ হয়ে যাচ্ছে শুধু এই একটি নেশার বস্তুর জন্য। নেশায় তলিয়ে যাচ্ছে যুব সমাজ। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর একটা সৎ চেষ্টা করেছেন। হয়ত পুরোটা সফল হননি। কিন্তু আশিভাগও যদি সফল হয়ে থাকেন, সেটাই বা কম কী?‌ গার্হস্থ্য হিংসা কমে, রাজনৈতিক বা সামাজিক হানাহানি কমে, অসুস্থতার হার কমে, আইন শৃঙ্খলার সমস্যা অনেকটাই কমে। এগুলো হয়ত উন্নয়নের ইনডেক্সে ধরা পড়বে না। হয়ত অনেকে বিরক্তও হবেন। হয়ত এই কারণে তিনি হেরেও যাবেন।

কিন্তু নীতীশ যদি হেরেও যান, তাঁর জন্য সহানুভূতি থাকবে। অন্তত মনে হবে, একজন মুখ্যমন্ত্রী ভোটে হারার ঝুঁকি নিয়েও এমন একটা সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.