সোহম সেন
মোহনবাহানের পর এবার ইস্টবেঙ্গল। তাদের সামনেও আসতে চলেছে আই এস এলে খেলার সুযোগ। বাংলার আরেকটা দল যদি আই এস এলে খেলে, বাঙালি হিসেবে তাতে আনন্দিত হওয়ারি কথা। কিন্তু এক্ষেত্রেও মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণা থেকে যাচ্ছে। অর্থাৎ, নিজেদের যোগ্যতায় নয়, পুরোপুরি মুখ্যমন্ত্রীর বদান্যতায় খেলতে হবে লাল হলুদকে।
কয়েক মাস আগে ঘটা করে শতবর্ষ পালন হল ইস্টবেঙ্গলের। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছেন লক্ষ লক্ষ সমর্থক। এত যাঁদের সমর্থক, তাঁরা একটা স্পন্সর জোগাড় করতে পারছেন না! এটা কার ব্যর্থতা! দিনের পর দিন এই কর্তারাই চেয়ার আঁকড়ে পড়ে আছেন। তাঁরা যে দারুণ ফুটবল বোঝেন, এমন অভিযোগ নেই। সমর্থকদের আবেগকে দারুণ সম্মান করেন, এমনটাও নয়। বরং, সভাপতি–সচিবের সঙ্গে ক্লাবের ফুটবলের তেমন কোনও সম্পর্কই নেই। অর্ধেক ফুটবলারকেও তাঁরা চেনেন না। অতীতের ফুটবলারদের কথা তো ছেড়েই দিলাম। সর্বময় কর্তা ক্লাবের নাম ভাঁড়িয়ে কী কী করেছেন, সিবিআই বেশ ভালভাবেই জানে। ফুটবলার বা সমর্থকদের কাছে এঁরা দারুণ জনপ্রিয়, এমনটাও বলা যাবে না।
এখন দেখা গেল, একটা স্পন্সর আনার ক্ষমতাও এঁদের নেই। তাহলে এঁদের জামাই আদর করে কর্তা রাখার কী মানে হয়! কোনও তৃণমূল নেতাকে বা মুখ্যমন্ত্রী আত্মীয়দের সভাপতি–সচিব করে দিলেই হয়। প্রতি পদে যদি মুখ্যমন্ত্রী দ্বারস্থ হতে হয়, তাহলে এমন কর্তা থাকার দরকার কী?
আই এস এলে নাম নথিভুক্ত করার শেষ তারিখ কবে ছিল? কোনও নির্দিষ্ট ঘোষণা পাবেন না। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী যখন চাইছেন, তখন কোনও নিয়মের তোয়াক্কা না করেই তাঁদের খেলানোর রাস্তা তৈরি হবে। মুখ্যমন্ত্রী কথা বলবেন নিতা আম্বানির সঙ্গে। ব্যাস, আর নিয়মের কী দরকার? হ্যাঁ, এভাবে বাঁকা পথ দিয়েই ঢুকতে হচ্ছে ইস্টবেঙ্গলকে।
স্পন্সর কারা? এখনও সেই নামটা সামনে আনা হয়নি। হতে পারে, রাজ্য সরকারের অধীনস্থ কোনও সংস্থা। হতে পারে এমন কোনও ব্যবসায়ী, যিনি মুখ্যমন্ত্রীর কথায় টাকা ঢালছেন। আগামীদিনেও ঢালবেন তো? কাল যদি সরকার উল্টে যায়, নতুন সরকার এসে যদি সাপ্লাই লাইন বন্ধ করে দেয়, তখন কী হবে? যেভাবে ক্লাবে ক্লাবে টাকা দিয়ে ভোটে বুথ দখলের কাজে লাগানো হয়, ইস্টবেঙ্গলের আবেগকেও সেভাবেই ব্যবহার করা হবে না তো? ক্লাবের বাইরে হয়ত দেখা যাবে মুখ্যমন্ত্রীর বড় হোর্ডিং বা কাট আউট। হয়ত অলিখিত শর্ত দেওয়া হবে, মুখ্যমন্ত্রীর কাট আউট গ্যালারিতেও নিয়ে যেতে হবে। হয়ত মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বা মিছিলে লোক পাঠানোর ফরমান আসবে। ক্লাবকর্তারা এসব দিক গুলো ভেবে দেখেছেন তো?
সুতরাং, স্পন্সর আসবে। হয়ত আই এস এলের দরজাও খুলে যাবে। কিন্তু শতবর্ষে এই অসহায় আত্মসমর্পণ ক্লাবের সম্মান কতটা বাড়াল, সমর্থকরা ভেবে দেখতে পারেন।