‌উত্তম–‌মুনমুন জুটি হয়েও হল না

উত্তম–‌সুচিত্রার জুটি তো সকলের কাছেই পরিচিত। কিন্তু জুটি বাঁধার কথা ছিল উত্তম–‌মুনমুনের। কী সেই ছবি?‌ কে পরিচালক?‌ কেন হল না?‌ উত্তমের প্রয়াণ দিবসে সেই অজানা কাহিনিতে আলো ফেললেন শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।

উত্তম সুচিত্রা জুটির নতুন রূপ পেতে চলেছিল উত্তম মুনমুন জুটি।
উত্তম কুমার মুনমুন সেন একই ছবিতে। আর সে ছবির প্রিমিয়ারে গেছেন সুচিত্রা সেন। স্বপ্ন দেখছেন মনে হচ্ছে? না।
উত্তমকুমার–‌মুনমুনকে নিয়েই ছবির কথা হয়। পার্থপ্রতিম চৌধুরি এই জুটিকে নিয়ে কাজ করার কথা ঠিক করেন। নায়ক–‌নায়িকা নয়, কিন্তু সারা ছবি জুড়ে উত্তম আর মুনমুন। ওরা করতেন শ্বশুর–‌বউমার চরিত্র। উত্তম পিয়ানো বাজাচ্ছেন আর মুনমুন গাইছেন
‘‌দীনহীনে কেহ চাহে না, তুমি তারে রাখিবে জানি গো।
আর আমি-যে কিছু চাহি নে, চরণতলে বসে থাকিব।’‌

দর্শকের চোখে আনন্দাশ্রু। কিন্তু এক অমোঘ নিয়তি তা হতে দিল না। দর্শকের চোখের জলের শ্রাবণ নামল অন্যভাবে। ২৪শে জুলাই, ১৯৮০ বাংলার প্রিয় মহানায়ক উত্তমকুমারের মহাপ্রয়াণ ঘটল। উত্তমের শেষ যাত্রায় এমন জনসমুদ্র কলকাতা আগে দেখেনি। শ্রাবণ ভেসে গেল অগণিত মানুষের চোখের জলে।

munmun

কত ছবি না হওয়া হয়ে গেল। তার মধ্যে একটি বিশেষ ছবি ছিল পার্থপ্রতিম চৌধুরির এই ছবি। যা উত্তম কুমার–‌ মুনমুন সেন করতেন। সেটি হত মুনমুনের প্রথম বাংলা বাণিজ্যিক ছবি। কিন্তু উত্তমের আকস্মিক প্রয়াণ বদলে দিল সব। সেই চিত্রনাট্য মুলতুবি থেকে গেল। উত্তমকে শেষ দেখা দেখতে গিয়েছিলেন সুচিত্রা। কিন্তু উত্তম বেঁচে থাকলে উত্তম–‌সুচিত্রা জুটি সুচিত্রা তনয়ার মাধ্যমে নতুন রূপ পেত। উত্তম–‌সুচিত্রা জুটি সৌকর্য, সৌন্দর্য এবং সম্মোহের প্রতীক। উত্তম কুমার–‌ সুচিত্রা সেন জুটি হয়ে উঠেছিল চিরন্তন প্রেমের প্রতীক। পর্দায় তাঁদের প্রেম ছিল বাঙালির গহন অবচেতনে লুকিয়ে থাকা বৈষ্ণব গীতিকবিতা। তখনকার দিনে উত্তম–‌সুচিত্রার বিভিন্ন ছবির দৃশ্য অনুকরণে নবদম্পতিরা পাড়ার স্টুডিওতে গিয়ে ছবি তুলিয়ে আনন্দ পেতেন। সেই জুটি শেষ হল ২৪শে জুলাই, ১৯৮০। সুচিত্রা সেন গভীর রাতে শ্বেতশুভ্রবস্ত্র পরিহিতা হয়ে মালা নিয়ে গেলেন উত্তম কুমারের বাড়িতে। সুচিত্রা সেন পৌঁছেছেন শুনেই শোরগোল শুরু হয়ে গেল। ঘরে ঢুকে অনেকক্ষণ ধরে মহানায়িকা দেখলেন মহানায়ককে। ধীরে ধীরে মালাটা পরিয়ে দিলেন গলায়। উত্তম–‌ জায়া গৌরী দেবী সেই ক্লাইম্যাক্সে বলে বসলেন সুচিত্রাকে এক মোক্ষম সিনে-ডায়ালগ ‘‌তুমিই তো আসল লোক ওর গলায় মালা পরাবার’‌।
সেদিনই উত্তম–‌সুচিত্রা জুটি শেষ। কিন্তু দর্শকের মনে রুপোলী পর্দায় কোনওদিন শেষ হওয়ার নয় ওঁদের জুটি। যত জুটি আসুক, ওঁরাই সেরা, ওঁরাই চিরন্তন।

মুনমুনের ছবির জগতে আসা কোনওদিনই সমর্থন করেননি সুচিত্রা। কিন্তু যদি দেখতেন তাঁর নায়ক তাঁর ‘‌উতু’‌র সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করছেন মুনমুন, মন গলত কি মহানায়িকার?

পার্থপ্রতিম চৌধুরির সেই ছবির শ্যুট হল, রিলিজ করল ১৯৮২সালে। ছবির নাম ‘‌রাজবধূ’‌। উত্তম কুমার না থাকায় তাঁর না করা চরিত্রটি করলেন উৎপল দত্ত। আর ছবিতে তাঁর পুত্রবধূর রোল করলেন মুনমুন। এছাড়াও ছিলেন ছায়া দেবী, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, রঞ্জিত মল্লিক ও শমিত ভঞ্জ। টিমটা দেখলে বোঝা যায়, এঁরা সবাই ছিলেন উত্তমের সহকর্মী, সহযোদ্ধা, বন্ধু কেউবা অভিভাবক। সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।

উত্তম ও সুচিত্রা কন্যা মুনমুন এই ছবি করলে ছবিটি আরও ল্যান্ডমার্কিং ছবি হত। কিন্তু নিয়তির খেলায় সে সম্ভব হল না। সুপ্রিয়া কন্যা সোমার শ্বশুর হয়ে অভিনয় করেছিলেন উত্তম ‘‌কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’‌তে। কিন্তু সুচিত্রা কন্যার সঙ্গে মহানায়ক অভিনয় করলে ‘‌রাজবধূ’‌ একটা অন্য মাত্রা পেত।‌‌

******

বেঙ্গল টাইমসের মহানায়ক স্পেশাল।

আস্ত ই–‌ম্যাগাজিন। রয়েছে নানা আঙ্গিকের ১৮ টি লেখা।

পড়তে হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন। প্রচ্ছদের ছবিতেও ক্লিক করতে পারেন। তাহলেও পুরো ম্যাগাজিনটি খুলে যাবে।

https://www.bengaltimes.in/BengalTimes-MahanayakSpecial.pdf‌‌‌‌‌

 

cover1.indd

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.