রক্তিম মিত্র
গত তিন দশক ধরে দাবিটা শুনে আসছি। কিছু একটা ঘটলেই সিবিআই তদন্ত চাই। আগে কথায় কথায় মমতা ব্যানার্জি এটা দাবি করতেন। এখন দাবি করছে বিজেপি। হেমতাবাদে বিধায়কের মৃত্যুকে ঘিরে আবার সেই দাবি শুরু হয়েছে।
কতগুলো বিষয় খুব খোলা চোখেই ধরা পড়ছে। এই মৃত্যুর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। সত্যি করে বলুন তো, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত কজন দেবেন্দ্রনাথ রায়ের নাম শুনেছিলেন? জেলার বাইরের কথা তো ছেড়ে দিন। জেলার মধ্যেই কজন তাঁকে চিনতেন! মনে করে দেখুন তো, গত তিন বছরে বিধানসভায় এমন কোন ভূমিকা পালন করেছেন যার জন্য আলাদা করে তাঁকে চেনা যায়। চেনার কথাও নয়। কারণ, রাজনৈতিকভাবে বা সাংগঠনিকভাবে তাঁকে গুরুত্ব দেওয়ার কোনও কারণ ছিল না। ফলে, তাঁকে সরিয়ে দিলে তৃণমূলের রাজনৈতিক লাভ, এমনটা অতিবড় পাগলেও বিশ্বাস করবে না।
মৃত্যুর কারণগুলো ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছে। আরও কয়েকটা বিষয় সামনে আসবে। সহজ কথা, আত্মহত্যাই হোক বা খুন, আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত ব্যাপারেই এই মৃত্যু। এদিক ওদিক থেকে ধার করেছিলেন। চড়া সুদে সেই টাকা খাটিয়েছিলেন। কিন্তু যাঁদের ওপর ভরসা করেছিলেন, তাঁরা ডুবিয়েছিলেন। সেই টাকা আদায় করতেও পারছিলেন না। মানসিক কষ্টে ভুগছিলেন। সেখান থেকে আত্মহত্যা হতে পারে। আবার সেই টাকা আদায় করতে গিয়ে এমন কোনও তিক্ততা তৈরি হয়েছিল, যার ফলে তাঁকে মেরে টাঙিয়ে দেওয়াও হতে পারে। কিন্তু যেটা বলতে চাইছি, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্কই নেই।
কিন্তু বিজেপিকে বাজার গরম করতেই হবে। তাই সিবিআই–এর দাবিতে জেলায় জেলায় আন্দোলন চলছে। বিজেপিও জোর গলায় দাবি করছে, মিডিয়াও লিখছে, তিনি বিজেপি বিধায়ক ছিলেন। না, তিনি বিজেপির হয়ে জেতেননি। চার বছর আগে তিনি জিতেছিলেন সিপিএমের হয়েই। লোকসভা ভোটের পর যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। কিন্তু কাগজে কলমে এখনও তিনি সিপিএমেরই বিধায়ক। কী অবলীলায় তাঁকে বিজেপি বিধায়ক বলে চালানো হচ্ছে!
এবার আসি সিবিআই প্রসঙ্গে। কোন আক্কেলে সিবিআই তদন্ত চাইছেন! সারদা–নারদার পরেও শিক্ষা হয়নি? গত ছ বছর ধরে সিবিআই নামক বস্তুটি অশ্বডিম্ব প্রসব করেই চলেছে। যেটা ছদিনে হয়ে যাওয়ার কথা, ছ বছরেও এরা তা করে উঠতে পারল না। কোন বোঝাপড়ায় বছরের পর বছর সিবিআই শীতঘুম দিল, তা রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব এখনও বুঝতে পারছেন না! যদি সিবিআই চাইতেই হয়, আগে দিল্লি নেতৃত্বের কাছে জানতে চান, কেন সারদা–নারদার তদন্ত এখনও হল না! রাজীব কুমারকে নিয়ে কতই নাটক। অথচ, এখন রাজীব দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সিবিআই–এর দেখা নেই। পাড়ার পল্টু বা থানার কনস্টেবল যেটা পারেন, সিবিআই সেটাও পারে না। গত ছ বছরে এটা জলের মতোই পরিষ্কার। একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা সম্পর্কে এমন কথা বলা শোভনীয় নয়। কিন্তু কী আর করা যাবে! সিবিআই নিজেই নিজেদের এই জায়গায় নামিয়ে এনেছে।
রাজ্য পুলিশের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। কিন্তু তাঁদের ট্র্যাক রেকর্ড অন্তত সিবিআই–এর থেকে অনেক ভাল। তাই সিবিআই–এর দাবিতে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ না করে বরং সিবিআই দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখান। দিল্লি নেতারা যখন ভাষণ দিতে আসেন, তাঁদের কাছে জানতে চান, সিবিআই–কে এমন অপদার্থ কেন বানানো হল! শাসকের কাছেই প্রশ্ন করতে হয়। তবু এক্ষেত্রে বিরোধীদের কাছেই প্রশ্নটা করা যাক, কোন মুখে সিবিআই চাইছেন!