দেখতে দেখতে একমাস পেরিয়ে গেল। ঠিক এক মাস আগে পৃথিবীকে ‘আলবিদা’ জানিয়েছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত। এই এক মাসে কত ঝড়ঝাপটা বয়ে গেছে বলিউডের ওপর। কত ঝড় উঠছে কত অচেনা অনুরাগীর হৃদয়ে। এক মাস পর সেই দিকে আলো ফেলার চেষ্টা। ধারাবাহিক লেখায় সুশান্ত সিংকে তুলে আনলেন ইন্দ্রাণী রাহা। আজ প্রথম পর্ব। আগামী সাতদিন সাত কিস্তি। আপলোড হবে ঠিক সকাল আটটায়। চোখ রাখুন বেঙ্গল টাইমসে।
এই ব্রম্ভাণ্ডে এনার্জি অর্থাৎ শক্তির কোনও ক্ষয় হয় না। একশক্তি অন্য শক্তিতে রূপান্তরিত হয় মাত্র। অফুরান শক্তি ছিল তাঁর। তার সেই শক্তির টুকরো টুকরো অংশ আজ সারা দেশবাসীর মনে আগুন হয়ে জ্বলছে। এই আগুন প্রতিবাদে নয়, প্রতিশোধের।
চক্রান্ত নাকি বিষণ্ণতা, কে তাকে কেড়ে নিয়েছে; সেই বিতর্কে কোনওভাবেই যেতে চাই না। কারণ, তাঁর বিষন্নতার পেছনেও সুপরিকল্পনা স্পষ্ট দৃশ্যমান এবং সেই পরিকল্পনা যেমন দীর্ঘ তেমন নিষ্ঠুর। তাঁর পোশাকী নাম স্বজনপোষণ বা নেপোটিজম। এই নেপোটিজম খানিকটা অন্ধকার গুমঘরের এর মতো, আঁতে ঘা দিয়ে দিয়ে, তিলে তিলে মানুষটির মনটাকে মেলে ফেলা। তার চেয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে একবারে মেরে ফেলাতে, সে খানিকটা স্বস্তিই পেয়েছে।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ করে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁকে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলা অথবা তাঁর অনুপস্থিতিতে ইচ্ছে করে তাঁর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তাঁকে নানাভাবে অপদস্থ করা, এই বিষয়গুলো তাঁরও কানে এসেছেন। সবসময় মুখ ফুটে বলতে হয়ত পারেননি। মনে মনেই লালন করেছেন যন্ত্রণাকে। তাই প্রতিবাদ নয়, চাই প্রতিশোধ।
‘আজ কে বলে গো এই প্রভাতে নেই তুমি’।
বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে একটি একটি করে জিনিসপত্র গুছিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পাটনার রাজীবনগরের বাড়িতে মিউজিয়াম তৈরি করা হবে, তোমার নামে। তাই ‘জিরা-জোহোর’ ধূলায় পড়ে থাকবে। কারণ, তুমি যে ‘পরশপাথর’। যেখানেই ছুঁয়েছ, সেখানেই সোনা ফলিয়েছ। শিক্ষা থেকে ক্রীড়া, অভিনয় থেকে দানধ্যান, পোয়েট্রি থেকে প্লেনচালানো সমস্ত রকম পরস্পর বিরোধী আঙ্গিকে তুমি সমান পারদর্শী, তুমি সব্যসাচী।
তোমাকে নিয়ে ভাবতে, লিখতে, বলতে সবভাবেই হাঁপিয়ে উঠেছি, তবুও তুমি অফুরান। ঠিক শক্তি বা এনার্জির মতো।
তবে নিশ্চিত থেকো, তোমার মৃত্যুর সুবিচার চাইতে ক্লান্ত হব না, থেমে যাব না। কারা তোমাকে কেড়ে নিয়েছে আমাদের থেকে ?
আমরা হারিয়ে ফেলেছি তোমার জাগতিক অস্তিত্বকে। কিন্তু তোমার আত্মিক অস্তিত্ব নারী–পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটি বয়সের মানুষের মনে ঠাঁই পেয়েছে। তুমি সুশান্ত সিং রাজপুত।
(পরপর সাতদিন প্রকাশিত হবে সুশান্ত সিং রাজপুতের স্মরণে বিশেষ এই ধারাবাহিক। পরের কিস্তি বুধবার, সকাল আটটায়)