ব্রিগেডে লাখ লাখ জনতার সামনে ছেড়ে দিন ভিক্টরকে

স্বরূপ গোস্বামী

শীত একটু একটু করে ফিকে হয়ে আসছে। ব্রিগেড নিয়ে একটু একটু করে উষ্ণতা বাড়ছে। মূলস্রোত মিডিয়া হয়ত নীরব। কিন্তু মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ছে বার্তা। সোশ্যাল মিডিয়াও লাল পতাকা আর নানা অঙ্গীকারে ছয়লাপ।

ব্রিগেড কেন, তার তাৎপর্য কী, এসব নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, হবে। সরাসরি বিষয়ে ঢুকি। ব্রিগেডের বক্তা তালিকায় কিছু নতুন মুখ দেখতে চাই। প্রচলিত রীতি মেনে সব দলের রাজ্য সম্পাদকরা বলে থাকেন। কিন্তু এবার সেই রীতিতে একটু বদল আনা হোক। কানহাইয়া কুমারকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ। কোনও সন্দেহ নেই, কানহাইয়া ঝড় তুলবেন। সেইসঙ্গে বিনীত সংযোজন, ব্রিগেডের বক্তা হিসেবে দেখতে চাই আলি ইমরান (‌ভিক্টর)‌কে।

victor10

উত্তরবঙ্গের এই তরুণ তুর্কি বিধায়ক গত কয়েক বছরে বাম কর্মী–‌সমর্থকদের মধ্যে দারুণভাবে ছাপ ফেলেছেন। বিধানসভার ভেতরে যেমন সক্রিয়, মাঠ ময়দানের লড়াইয়েও তেমনই সক্রিয়। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও বামেরা সবথেকে ভাল লড়াই করেছে উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ায়। এই তরুণ তুর্কি বিধায়ক দেখিয়ে দিয়েছেন, লড়াই কাকে বলে। প্রতিটি আসনে বামফ্রন্ট প্রার্থী দিতে পেরেছে। কারণ, এক বছর আগে থেকে প্রস্তুতি ছিল, লড়াইয়ের পটভূমি ছিল। নিছক সোশ্যাল মিডিয়ায় অস্তিত্ব জাহির করা নয়, প্রতিটি লড়াইয়ের মুহূর্তে ছিলেন সামনের সারিতে। এমন নয় যে তৃণমূল সেখানে খুব সুবোধ বালকের মতো আচরণ করেছে। গোটা বাংলায় যা করেছে, তার থেকে অনেক বেশি চেষ্টা করেছিল চাকুলিয়ায়। কিন্তু তৈরি ছিলেন ভিক্টর। তাই সন্ত্রাসের সব প্রস্তুতি ভেস্তে দিতে পেরেছেন। সাহসের সঙ্গে, একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। গোটা রাজ্যে বামেরা একটিই জেলা পরিষদ আসনে জিতেছে। সেটি চাকুলিয়াতেই। পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতেও সবথেকে সম্মানজনক ফল সেই চাকুলিয়াতেই।

তৃণমূলে যাওয়ার অনুরোধ, লোভনীয় প্রস্তাব বারেবারেই পেয়েছেন। একবার ‘‌হ্যাঁ’‌ বললেই ক্যাবিনেটের বড়সড় দপ্তর বাঁধা। এই হাতছানিকে ফেরাতে বুকের পাটা লাগে বইকি। রাজি না হওয়ায় চাপ, হুমকিও পেয়েছেন। তাঁকে জব্দ করতে কত ষড়যন্ত্রই না চলছে। তাও রোখা যায়নি। বুক চিতিয়ে লড়াই করে চলেছেন। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কীভাবে পাল্টা লড়াই ফিরিয়ে দিচ্ছেন, তা সিনেমায় দেখা যায়, বাস্তবে সচরাচর দেখা যায় না। হ্যাঁ, কলকাতার মিডিয়ায় এসব লড়াইয়ের কথা উঠে আসে না। আসার কথাও নয়।কারণ, ভিক্টরের লড়াইয়ের কথা ছাপতে গেলে যে ন্যূনতম বুকের পাটা লাগে, তা অধিকাংশ মিডিয়ার নেই। তবু এখন হাতের মোবাইলটা অনেক হদিশ দিয়ে যায়। চাইলে, ইউটিউবে আলি ইমরান ভিক্টর সার্চ মেরে দেখতে পারেন। তাঁর লড়াইয়ের কিছু টুকরো, জ্বালাময়ী ভাষণের কিছু ঝলক পেতেও পারেন।

গোটা রাজ্য যখন ভাইপোর দাপট দেখছে, তখন তার পাল্টা তুরুপের তাস হতে পারেন ভিক্টর। তাঁর একটা ভাষণ শুনলেই বুঝতে পারবেন, এ কোনও সাজানো চিত্রনাট্য নয়। দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, জনপ্রিয়তা, লড়াই, বাগ্মীতা–‌কোনও কিছুতেই ভিক্টরের ধারেকাছেও নেই স্বনামধন্য ভাইপো। ব্রিগেডে একবার পরীক্ষা হয়ে যাক। কানহাইয়ার পাশাপাশি এই যুবক ব্রিগেডকে মাতিয়ে দিতে পারেন।

ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্বের কাছে অনুরোধ, এই মঞ্চে মাইকটা ভিক্টরের হাতেই ছেড়ে দিন। রাজ্য সম্পাদক হিসেবে নরেন চ্যাটার্জি পূর্ণ মর্যাদা নিয়েই মঞ্চে থাকুন। দরকার হলে তিনি জনতার সঙ্গে ভিক্টরের পরিচয় করিয়ে দিন। তারপর তাঁর হাতে মাইক তুলে দিন। দেখুন, উত্তাল ব্রিগেড কীভাবে এই তরুণ তুর্কিকে গ্রহণ করে। নরেনবাবু ভাষণ দিলে রুটিনমাফিক কিছু হাততালি নিশ্চয় পড়বে। কিন্তু ভিক্টরের বক্তব্য নতুন এক ভোরের বার্তা নিয়ে আসবে।

বাম নেতৃত্ব যেভাবে কানহাইয়াকে সামনে আনার সাহসিকতা দেখিয়েছেন, ঠিক তেমনি ভিক্টরের ক্ষেত্রেও সাহসিকতা দেখান। নতুন মুখ তুলে ধরার এটাই সঠিক সময়। নিছক ফাটকা বা চমক নয়। এই সুযোগ তাঁর প্রাপ্য। ভিক্টরের লড়াই গত কয়েকবছর ধরেই পরীক্ষিত, প্রমাণিত। এ কথা মিডিয়া না জানুক, আপনাদের অজানা নয়। তাই আর দেরি নয়, সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে লক্ষ লক্ষ জনতার সামনে ছেড়ে দিন ভিক্টরকে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.