সুমিত চক্রবর্তী
এই প্রথম কোনও রাজ্যপালের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দেখলাম। কোনও রাজ্যপালকে এত বিতর্কিত কথা বলতে এর আগে শুনেছি বলে মনে পড়ছে না। রাজ্য সরকার ও রাজ্যপালের তিক্ততা কোন জায়গায় এসে পৌঁছেছে, এই সাক্ষাৎকারটি তার একটি দলিল হয়ে উঠতে পারে।
একজন রাজ্যপাল এভাবে ইন্টারভিউ দিতে পারেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তিনি এক্তিয়ার ছাড়িয়ে গেছেন কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে যে কথাগুলি বলেছেন, সেগুলি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সরকার কীভাবে চলছে, তা এই সাক্ষাৎকার আরও পরিষ্কার বুঝিয়ে দিল।
এটা নিয়ে কোনও দ্বিমত থাকার কথা নয়, পুজো কার্নিভালের দিন রাজ্যপালকে যথেষ্ট অপমানিত হতে হয়েছে। সচেতনভাবেই হয়ত তাঁকে ব্ল্যাক আউট করা হয়েছে। পুরো অনুষ্ঠানটা যেন একজনকে প্রোমোট করার জন্যই হয়েছে। মূর্তিগুলো এসে থেমে যাচ্ছে তাঁর কাছে। সমস্ত শোভাযাত্রা যেন শুধু তাঁকে দেখানোর জন্যই। বাকি সবাইকেই বড্ড বেশি গৌন মনে হয়েছে। রাজ্যপালকে ডেকে এনে এভাবে হেনস্থা না করলেই পারতেন। এই ব্যাপারে রাজ্যপালের ক্ষোভ যথেষ্টই সঙ্গত।
তিনি যে নিছক প্রোটোকলে বন্দি থাকার মানুষ নন, সেটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন। ভবিষ্যতেও এই জাতীয় আচরণ হলে তিনি একইভাবে সরব হবেন, তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন। রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা কোন খাতে প্রবাহিত হচ্ছে, সে ব্যাপারেও কোনও রাখঢাক না রেখেই মন্তব্য করেছেন। আর রাজ্যের মিডিয়া! তাঁদের অসহায়তার কথাও রাজ্যপালের অজানা নয়।
সঞ্চালক দারুণ ইন্টারভিউ নিলেন, এ নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু কোথাও কোথাও বড্ড বেশি অতিনাটকীয়তা এসে গেছে। প্রশ্ন করছেন রাজ্যপালকে। কিন্তু প্রশ্নগুলো যেন ‘গ্যালারি শো’ হয়ে গেল। মনে হল যেন প্রশ্নগুলো অন্যদের শোনাতে চাইছেন। স্বাভাবিক গতিতে সাক্ষাৎকার এগিয়ে চলুন। দর্শক ঠিকই শুনবেন। কিন্তু দর্শককে শোনানোর দিকে, নিজের নম্বর বাড়ানোর দিকেই যেন বেশ মনযোগ ছিল। তাই রাজ্যপাল কোথাও কোথাও গৌন থেকে গেলেন। আনাড়ি সঞ্চালকের ক্ষেত্রে এই অতি নাটকীয়তা আসতেই পারত। কিন্তু অভিজ্ঞ সঞ্চালক হাততালি নেওয়ার লোভটা সামলাতে পারলেন নাও!