যে সমন্বয়টা বিধানসভার ভেতর দেখা যায়, তা বাইরে দেখা যায় না কেন? জোট হলে হোক, তবে আন্তরিকভাবেই হোক। ধরি মাছ, না ছুঁই পানি নয়। জোট নয়, আসন সমঝোতা— এই জাতীয় কোনও বিবৃতিও নয়। জোট হোক সৎভাবে। এই সদিচ্ছা দুই তরফেই তৈরি হোক। ওপেন ফোরামে লিখেছেন অমিত ভট্টাচার্য।
সোনিয়া গান্ধী নাকি সোমেন মিত্রকে বলেছেন, তৃণমূলের সঙ্গে নয়, জোট করলে বামেদের সঙ্গেই করুন। এখনই কথা বলুন। শোনা যায়, দিল্লি থেকেই নাকি সোমেন মিত্র ফোন করেছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্রকে। তার মানে, আবার জোট প্রক্রিয়া শুরু হবে। আবার আলাপ–আলোচনা শুরু হবে।
তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে বিরাট অংশের মানুষ বেছে নিয়েছিলেন বিজেপিকে। এই রাজ্যে বিজেপি যা ভোট পেয়েছে, তার অধিকাংশটাই তাদের নিজেদের ভোট নয়। সেটা এসেছে কিছুটা তৃণমূলের দিক থেকে, কিছুটা বামের দিক থেকে। যাঁদের মনে হয়েছে, তৃণমূলকে সরাতে পারলে বিজেপিই পারবে, তাঁরা বিজেপিকেই বেছে নিয়েছেন। তখন যদি বাম–কং জোট প্রক্রিয়া ঠিকঠাক শুরু হত, তাহলে হয়ত বিজেপি–মুখী এই স্রোতটা থাকত না। এখন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই জোট ভেস্তে দেওয়ার জন্য কোনও বড়সড় চক্র কাজ করেছিল।
যাই হোক, দেরিতে হলেও যদি বাম–কং নেতৃত্ব ভুলটা বুঝতে পারেন, সেটাও মন্দের ভাল। জোট যদি হয়, তবে শেষ দফায় নয়। সেই প্রক্রিয়া এখন থেকেই শুরু হোক। ধরি মাছ, না ছুঁই পানি গোছের মেলামেশা নয়। একেবারে আন্তরিকভাবেই এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সব ছুঁৎমার্গ শুরুতেই বর্জন করতে হবে। জোট নয়, আসন সমঝোতা— এই জাতীয় বাক্যগুলো জোটের পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, এটা সবাইকেই বুঝতে হবে।
সহজ কথা, শুধু কয়েকটা আসন ভাগাভাগি নয়। মাঠে ময়দানের লড়াইটাও একসঙ্গেই লড়তে হবে। বিধানসভায় যদি সমন্বয় রেখে কর্মসূচি নেওয়া যায়, তাহলে বিধানসভার বাইরেই বা হবে না কেন? একটু চেষ্টা করলেই এই সমন্বয় আনা যায়। আগে দরকার সদিচ্ছা। যেটুকু মনে হয়েছে, রাজ্য কংগ্রেসের দিক থেকে সেই সদিচ্ছা ছিল। ঘাটতি ছিল বাম শিবিরেই। প্রথমত, শরিকি বিবাদ। কিছু কিছু নেতার অদ্ভুত গোঁ। নিজেদের শক্তি সম্পর্কে যাদের সম্যক ধারনাই নেই। অথচ, অদ্ভুত কিছু বাগড়া দিয়ে জোটের পরিবেশটাকে তাঁরা জটিল করে তুলেছিলেন। সিপিএমের নিজেদের মধ্যেও জটিলতা কম নেই। তাঁদেরও স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে। সেই লক্ষ্যে এগোতে হবে।
কংগ্রেসকেও বুঝতে হবে, যেখানে যত খুশি আসন চেয়ে বসলেই হবে না। তাঁদেরও নিজেদের শক্তি বুঝেই আসন চাইতে হবে। যা প্রাপ্য,তার থেকে নিশ্চয় বেশিই দেওয়া হবে। কিন্তু যা প্রাপ্য, তার তিন–চারগুন চেয়ে বসলে তো মুশকিল। পাশাপাশি গত বিধানসভা নির্বাচন আরও একটা শিক্ষা দিয়েছে। তৃণমূল থেকে আসা লোককে দুম করে টিকিট দেওয়া চলবে না। কারণ, জেতার পর কোনও না কোনও অছিলায় তাঁরা আবার তৃণমূলেই ফিরছেন। তাই যাঁকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে, তিনি কতটা বিশ্বাসযোগ্য, সেটা মাথায় রাখতে হবে।
সবচেয়ে বড় কথা, জোট কোনো পাটিগণিত নয়, এটা একটা রসায়ন, এটা অনুভব করতে হবে। কোনও কেন্দ্রে কংগ্রেসের ভোট হয়ত পাঁচ হাজার। তার সবটা বামেদের বাক্সে আসবেও না। কিন্তু ওই পাঁচ হাজার আসছে, এটা ঠিকঠাক প্রচার হলে একটা অনুকূল হাওয়া তৈরি হবে। তখন বিজেপি মুখী স্রোতকে কিছুটা আটকানো যাবে। যাঁরা দোদুল্যমান, তাঁদের কিছুটা ভরসা অর্জন করা যাবে। সেইসঙ্গে যাঁরা নানা কারণে তৃণমূলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ, তাঁদের একটা অংশের আস্থা পাওয়া যাবে। সবমিলিয়ে একটা সম্মানজনক জায়গা তৈরি হতেই পারে। সেই আস্থার পরিবেশটা তৈরি করাই দুই শিবিরের প্রধান কাজ।
(ওপেন ফোরাম। পাঠকের মুক্তমঞ্চ। নানা বিতর্ক, নানা মত উঠে আসে বেঙ্গল টাইমসে। আপনিও এতে অংশ নিতে পারেন। চাইলে, আপনিও আপনার সুচিন্তিত মতামত পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: bengaltimes.in@gmail.com)