বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন: হঠাৎ দলত্যাগ নিয়ে খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছেন বিধানসভার স্পিকার মশাই। হঠাৎ তাঁর মনে হয়েছে, এক দলের টিকিটে জিতে অন্য দলে যাওয়া খুব খারাপ জিনিস। তাই, তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া বিধায়কদের চিঠি ধরিয়েছেন। জানতে চেয়েছেন, তিনি কোন দলে আছেন? জানতে চেয়েছেন, তাঁদের দলত্যাগের ঘটনা সত্যি কিনা। বিধানসভা সূত্রের খবর, এই দলত্যাগী বিধায়কদের সদস্যপদ খারিজ করতে চাইছে শাসক দল। আর তাতেই সম্মতি দিতে চলেছেন অধ্যক্ষ।
কেউ একদলের টিকিটে নির্বাচিত হয়ে অন্য দলে গেলে দলত্যাগ বিরোধী আইনে পড়তে হয়। এক তৃতীয়াংশ সদস্য গেলে অবশ্য আইনে ছাড় আছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, একজন বা দুজন করে দলত্যাগ করছেন। দিব্যি অন্য দলে যোগ দিচ্ছেন। এমনকী তাঁদের বিধানসভায় বসার জায়গাও বদলে যাচ্ছে। এই রাজ্য গত আট বছরে দলবদলটা মোটামুটি নিয়মে পরিণত হয়েছে। ২০১১–১৬ এই পর্যায়ে অন্তত কুড়ি জন দলবদল করেছেন। ২০১৬–র পরেও এই প্রবণতা থামেনি। বরং কিছুটা বেড়েছে। দ্বিতীয় দফাতেই কুড়ি জনের মতো দলত্যাগ করে অন্য দলে যোগ দিয়েছেন। কখনও বাম, কখনও কংগ্রেস নালিশ জানিয়েছে। স্পিকার মশাইও যথারীতি সেইসব অভিযোগকে তেমন পাত্তা দেননি। নাম কে ওয়াস্তে দু একজনকে চিঠি পাঠিয়েছেন। তারপর অনন্ত সময় অপেক্ষা।
হঠাৎ, তাঁর তৎপরতা শুরু হল যেন তৃণমূল ছেড়ে অন্য দলে যাওয়া শুরু হল। দলত্যাগ হলে, তাঁর বিরুদ্ধে নালিশ জমা হলে, স্পিকার দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। এটাই কাম্য। এটাই হওয়া উচিত। তাই তৃণমূল ছেড়ে যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের নোটিশ ধরিয়ে স্পিকার মশাই ভুল কিছুই করেননি। এটাই স্পিকারের দায়িত্ব। কিন্তু এই তৎপরতা গত আট বছরে কোথায় ছিল? একের পর এক দল ভাঙিয়ে যখন শাসকদলের পতাকা তুলে দেওয়া হয়েছে, তখন স্পিকার মশাই নীরব ছিলেন কেন? বিরোধীরা ভিডিও ফুটেজ, পেপার কাটিং সহ নানা অকাট্য প্রমাণ দিয়েছেন। সেগুলিকে উপেক্ষা করেছেন। আজ তৃণমূলের অভিযোগ পেতেই এত সক্রিয় হয়ে উঠলেন কেন?
স্পিকার পদটাকে সত্যিই বড় হাস্যকর করে তুলছেন এই ভদ্রলোক। বিধানসভার এমন অবমাননা আর কখনও হয়নি। অধিকাংশ দপ্তরের বাজেট নিয়ে আলোচনা হয় না। দিব্যি গিলোটিনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের প্রশ্ন করলে কোনও উত্তর পাওয়া যায় না। মুলতুবি প্রস্তাব তুলতে দেওয়া হয় না। বিরোধীদের ওপর হামলা হয়। তাঁদের বলতে দেওয়া হয় না। হল্লাবাজি চলতেই থাকে। গুরুমশাই যথারীতি নীরব হয়েই থাকেন। অতত চল্লিশখানা দলবদল হয়ে যাওয়ার পরেও কারও সদস্যপদ খারিজের সৎসাহস দেখাতে পারেননি। এখন হঠাৎ করে তিনি অতি সক্রিয় হয়ে উঠছেন। এই উদ্যোগ অনেক আগে দেখানো উচিত ছিল। এমনিতেই স্পিকার পদের মর্যাদা অনেকটাই খাটো করেছেন। এই অতি সক্রিয়তায় সেই চেয়ারকে আরও খানিকটা কলঙ্কিত করতে চাইছেন।