প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো জানা

হেমন্ত রায়

পোস্টার দেখে একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। আবার হয়ত নতুন কোনও গোয়েন্দা চরিত্র আসছে। এমনিতেই বাংলা সাহিত্যে বা সিনেমায় গোয়েন্দার ছড়াছড়ি। তারও ওপর যদি আরও এক বুদ্ধিমান গোয়েন্দা পাওয়া যায়, মন্দী কী।

কিন্তু পুরো ছবিটা দেখার পর কিছুটা হতাশই হতে হল। এখানে না আছে গোয়েন্দাগিরি। না আছে সংবাদ জগৎ। না আছে বিনোদন জগৎ। ককটেল তৈরি করতে গিয়েই কিছুটা জগাখিচুড়ি হয়ে গেছে। ছবিতে শান্তিলাল (ঋত্বিক) একজন সাংবাদিক। গ্ল্যামারওয়ালা বা প্রভাবশালী সাংবাদিক নন। বরং, অফিসে, পাড়ায় তেমন কলকে না পাওয়া এক হতাশ সাংবাদিক। যাঁর কাজ হল দিনের শেষে আবহাওয়ার খবর লেখা। রোজ রোজ কী আর খবর থাকবে!  এডিটরের কথায় বিস্তর জল মেশাতে হয়। কদাচিৎ বাইলাইন মেলে। কাঁহাতক আর ভাল লাগে!

shantilal

হঠাৎ সুযোগ এসে যায় এক ফিল্মের প্রিমিয়ারে যাওয়ার। সেখানে টয়লেটে গিয়ে জেনে ফেলে এক রহস্য। এখানেও বড় এক প্রশ্ন। মহিলাদের টয়লেটে ঢোকার মতো বোকা বা সাহসী কোনওটাই শান্তিলাল নয়। আবার পুরুষ টয়লেটে নায়িকা ঢুকবেন, এমনটাও হওয়ার কথা নয়। চিত্রনাট্যে এখানে মস্ত এক গোঁজামিল। হঠাৎ শান্তিলালের ইচ্ছে হয়, পর্ন ছবির উৎস সন্ধান করার। কিছুটা পাগলামির বশেই চলে গেল চেন্নাই। কীভাবে পর্ন ছবি বানানো হয়, কারা বানায়, তার সঙ্গে বাংলার জনপ্রিয় নায়িকার সম্পর্ক কী, এসব সে খুঁজে বের করবে।

সেখানে জুটে যায় রকেট রঞ্জন নামে এক চরিত্র। যে বাঙালি, থাকে চেন্নাইয়ে। অনেকটা সবজান্তা গোছের। সেই হদিশ দিল, নীল ছবির নায়িকাকে খুঁজতে হলে সিঙ্গাপুরে যেতে হবে। সেখানেও নাকি রকেট রঞ্জনের যোগাযোগ। চলে গেল শান্তিলাল। সবকিছুই যেন আগাম নির্ধারিত। ফিরে এসে এক্সক্লুসিভ নিউজ নিয়ে দরাদরি। প্রথমে নিজের কাগজের এডিটরের সঙ্গে। পরে অন্য এক কাগজের এডিটরের সঙ্গে। শেষমেষ সেই নায়িকার (পাওলি) সঙ্গে যোগাযোগ। নানা প্রলোভন। অবশেষে শেষ হচ্ছে প্রথম পাতায় সেই এক্সক্লুসিভ স্টোরি দিয়ে।

যে শান্তিলাল প্রথম পাতায় নিজের নামে একটা খবর দেখবেন বলে সিঙ্গাপুর ছুটল, সে খবর বেরনোর দিনে বেলা পর্যন্ত ঘুম  দিল! তার মা কিনা ঘুম ভাঙিয়ে তাকে পেজ ওয়ান স্টোরি দেখাচ্ছেন! ঠিক হজম হল না। তাছাড়া, খবরের কাগজের ভেতরের ছবিটাও ঠিক বিশ্বাসযোগ্য নয়। অন্য পরিচালকের ধারনা না থাকতেই পারে, কিন্তু পরিচালক নিজে একজন সাংবাদিক ছিলেন। তাঁর এমন অস্পষ্ট ধারনা থাকবে কেন? এই ছাঁটাইয়ের বাজারে একজন শুধু ওয়েদার বিট করে, এটাও কেমন যেন বেমানান।

তাছাড়া, ছবিতে তেমন রহস্যও নেই। একটা প্রজাপতির উল্কি আর রাতে সিডিতে পান ছবির দৃশ্যটাই বলে দিয়েছিল, পরিণতি কী হতে চলেছে। তাহলে রহস্য কোথায় রইল! তবে, ঋত্বিকের অভিনয় বরাবরই বেশ উচ্চ মানের। পাওলিও ছাপ রেখেছেন। তবে, রহস্যকে ঘিরে যে প্রত্যাশা ছিল, তা একেবারেই পূরণ হল না। না গোয়েন্দাগিরি, না রিপোর্টারি। কোনও ইনিংসটাই ঠিকঠাক জমল না।

sejuti-invitation

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.