বেঙ্গল টাইমস প্রতিবেদন: মাঝে মাঝেই শোনা যায়, আইন আইনের পথে চলবে। কিন্তু কোনটা আইন, কোনটা তার পথ, সেটাই মাঝে মাঝে গুলিয়ে যায়। যেমন গুলিয়ে যাচ্ছে, কোনটা প্রতারণা, সেটা নিয়ে।
একজন অভিযোগ করেছেন, তিনি সত্তর লাখ টাকা খরচ করেছেন। তাঁকে নাকি প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, রেল বোর্ডের সদস্য করা হবে। কিন্তু সেই সদস্য করা হয়নি। তাই তিনি প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন।
তার মানে, যদি সত্যিই তাঁকে রেল বোর্ডের সদস্য করা হত, তাহলে সেটা প্রতারণা হত না। তা নিয়ে থানা–পুলিশও হত না। যেহেতু টাকা নিয়ে কাজটা করা হয়নি, তাই নাকি প্রতারণা। যেহেতু অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে, তাই পুলিশ তো অতি সক্রিয় হবেই। যাঁর নামে অভিযোগ, তাঁকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি মুকুল রায়ের নামও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুলিশ ক্রমশ নিজেদের হাসির খোরাক করে তুলছে।
ধরেই নিলাম, সেই ব্যক্তি রেল বোর্ডের মেম্বার হওয়ার জন্য সত্তর লাখ টাকা দিয়েছেন। তিনি নিজেই অভিযোগ করেছেন। তার মানে তিনি নিজে স্বীকার করেই নিলেন। আইন যেটুকু বলে, ঘুস দেওয়া এবং ঘুস নেওয়া দুটো নাকি অপরাধ। যিনি নিয়েছেন, তাঁর অপরাধ প্রমাণিত নয়। কিন্তু যিনি দিয়েছেন, তার অপরাধা তো তিনি নিজেই স্বীকার করে নিলেন। আগে বরং তাঁকেই গ্রেপ্তার করা হোক।
কেউ চাকরির জন্য বাধ্য হয়ে টাকা দিচ্ছেন, কেউ কোনও পরিষেবা পাওয়ার জন্য টাকা দিচ্ছেন, সেটা একরকম ব্যাপার। কিন্তু ইনি কিনা রেল বোর্ডের সদস্য হতে চান। সদস্য হয়ে কী করতেন? একে তাকে চাকরি পাইয়ে দিতেন। একে তাকে ঠিকাদারি পাইয়ে দিতেন। তার মানে, ভবিষ্যতে যেন দুর্নীতি করতে পারেন, সেই কারণে বিনিয়োগ করেছেন। এক্ষেত্রে অপরাধটা আরও বড়। তাহলে যিনি টাকা দিলেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না কেন?
ঘটনাটা নাকি ২০১৫ সালের। তখন তো মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দেননি। তখনও সরকারিভাবে তৃণমূলেরই রাজ্যসভার সাংসদ। তাহলে, তিনি হঠাৎ মুকুল রায়কে টাকা দিতে যাবেন কেন? যদি দিয়েও থাকেন, তার নৈতিক দায় যতটা বিজেপির, তার থেকে অনেক বেশি তৃণমূলের।
বোঝাই যাচ্ছে, প্রশান্ত কিশোরের দাওয়াই কাজ করছে না। প্রতিহিংসার পথ থেকে সরে আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিরোধীদের নামে মামলা দাও, হেনস্থা করো। এটা করতে গিয়ে কী ফল হল, সেটা দেখেও শিক্ষা হল না। অতিরিক্ত পুলিশ নির্ভরতা কতখানি বিপর্যয় ডেকে আনল, শিক্ষা হল না। আবার সেই পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া। না, এই তৃণমূল শোধরানোর নয়।