ধৈর্য কেড়ে নিচ্ছে ফেসবুক

নিবেদিতা পাল

ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপকে ঘিরে রোজই কোনও না কোনও অঘটন লেগেই আছে। কখনও ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যা। কখনও সেলফি তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনা। নতুন নতুন প্রযুক্তি। দিয়েছে অনেককিছু। কিন্তু কেড়ে নিয়েছে বোধ হয় তার থেকেও বেশি কিছু।

আমার সন্তান সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। পড়ে তো লিখলাম, কতখানি পড়ে, জানি না। কারণ, এখন তাকে আর বই হাতে দেখি না। সারাক্ষণ মোবাইল হাতে কী সব যেন করে চলেছে। জিও সিম হাতে আসার পর থেকে এই নেশা আরও বেড়েছে। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকে। সারাক্ষণ খুটখাট করতেই থাকে। কী করে, জানি না। তবে এটুকু বুঝি, যা করছে, তার সঙ্গে ওর পড়াশোনার কোনও সম্পর্ক নেই। মানছি, বয়সটাই খারাপ। এই বয়সেই অনেকে বখে যায়। পরে এই সময়টা আর ফিরে পাওয়া যায় না। ওকে বারবার বুঝিয়েছি। কোনও ফল হয়নি। উল্টে রেগে যায়। দিন দিন প্রচণ্ড অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছে। পরিষ্কার বুঝতে পারছি, ওর পড়ায় মন নেই। বাথরুমেও যায় ফোন নিয়ে। খেতে বসে খাওয়ার দিকেও মন থাকে না। এতটাই অ্যাডিক্টেড হয়ে গেছে, এক মুহূর্তও ফোন ছাড়া থাকতে পারছে না। আমার মতো অনেকের ঘরেই হয়ত এই সমস্যা। যার প্রতিকার কী, জানি না।

facebook5

তাই বাংলাদেশের একটা খবর পড়ে কিছুটা আশা জেগেছিল। সেখানে নাকি রাত দশটার পর ফেসবুক নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। আপাতভাবে এটা গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ মনে হতে পারে। কিন্তু নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে আমার অন্তত মনে হয়, আমাদের দেশেও এই দাবি ওঠা উচিত। ছোট্ট একটা দেশ। নিজের মাতৃভাষাকে ভালবেসে প্রাণ দিয়েছে। মাতৃভাষাকে ভালবাসে। অনেক ক্ষেত্রেই তারা আমাদের পথ দেখায়। যে যে সমস্যাগুলোর কথা বেঙ্গল টাইমসের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, আমাদের দেশেও তো সেই এক সমস্যা। পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে, অহেতুক রাত জাগছে, নিষিদ্ধ সম্পর্কে আসক্তি আসছে, কর্মসংস্কৃতি নষ্ট হচ্ছে। যাঁরা দেশ চালান, তাঁরা কি বুঝতে পারছেন না?‌ তাই, আমার দেশেও এই নিয়ম চালু হোক। রাত বারোটা নয়, রাত দশটা থেকে ফেসবুকের উৎপাত বন্ধ হোক।

জানি, অনেকের আপত্তি থাকবে। তাদের হয়ত কিছুটা অসুবিধাও হবে। কিন্তু বিরাট অংশের ছাত্র–‌যুবকে বাঁচানোর এছাড়া আর কোনও উপায় নেই। চোখের সামনে আস্ত একটা প্রজন্ম কেমন তলিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু দেখেও, সবকিছু জেনেও আমরা কেমন উদাসীন হয়ে আছি।

(‌এটি ওপেন ফোরামের লেখা। মতামত লেখিকার নিজস্ব। তবে, বেঙ্গল টাইমসে এই নিয়ে সুস্থ বিতর্ক চলতেই পারে। যুক্তি–‌পাল্টা যুক্তির স্রোত আসতেই পারে। আপনারাও আপনাদের মতামত লিখে জানাতে পারেন।)‌

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.