কেন তাঁকে নিয়েই জল্পনা, শুভেন্দু ভেবে দেখুন

সরল বিশ্বাস

দু’‌বছর পর শুভেন্দু অধিকারীর ঠিকানা কী হবে?‌ ঠিকানা মানে, বাড়ির ঠিকানা নয়। রাজনৈতিক আনুগত্যের ঠিকানা। নিশ্চিত করে কি বলা যায় যে তিনি তৃণমূলের টিকিটেই ফের নন্দীগ্রাম থেকে লড়াই করবেন?‌ নাকি অন্য কোনও দলের প্রার্থী হয়ে তৃণমূলের বাপবাপান্ত করবেন?‌ যতদূর মনে হয়, দ্বিতীয়টার সম্ভাবনাই বেশি। আর এটা সবথেকে ভাল জানেন স্বয়ং শুভেন্দু। এমনকী জানেন মমতা ব্যানার্জিও।

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর একটা কথা নিয়ে শোরগোল পড়েছে। তিনি এক সভায় বলেছেন, আগামীদিনে অনেকেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসবে। এমনকী সেই তালিকায় শুভেন্দু অধিকারীকেও দেখতে পাবেন। বিপ্লবের এই প্রচারে নিঃসন্দেহে চমক আছে। শুভেন্দুর গোঁসা হতেই পারে। তিনি মানহানির মামলাও করতে পারেন। কিন্তু তাতে কি জল্পনা থামানো যাবে?‌

বছর পাঁচেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে জল্পনা। বারবার শোনা গেছে, শুভেন্দু নাকি বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন। আজ নয়, কাল। কাল নয়, পরশু— এভাবেই টিকে থেকেছে জল্পনাটা। এমনও শোনা যায়, অমিত শাহের সভায় যোগ দেবেন বলে একবার নাকি কোলাঘাট পর্যন্ত চলেও এসেছিলেন। রাহুল সিনহাদের আপত্তিতে তখনকার মতো যোগদান নাকি ঠেকানো হয়েছিল।

বছর তিনেক আগে অধীর চৌধুরিও দাবি তুলেছিলেন, শুভেন্দু নাকি তাঁর সঙ্গে রাহুল গান্ধীর কাছে গিয়েছিলেন। তিনি নাকি তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিতে ইচ্ছুক, এমনটা জানিয়েছিলেন। অধীর প্রকাশ্যে সেই কথা বলে ঠিক করেছেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। কিন্তু তিনি যে অধীরের সঙ্গে রাহুলের কাছে যাননি, এমনটা বিশ্বাস করা কঠিন। অধীর হয়ত সত্যবাদী যুধিষ্ঠীর নন, কিন্তু এক্ষেত্রে তিনি সত্যি বলছেন বলেই মনে হয়।

subhendu2

আচ্ছা, তিনি তো তমলুকের এমপি ছিলেন। হঠাৎ তিনি বিধানসভায় দাঁড়াতে গেলেন কেন?‌ রাজ্যের মন্ত্রী হবেন বলে?‌ একেবারেই না। মমতা একটি বিশেষ উদ্দেশ্যেই তাঁকে বিধানসভায় প্রার্থী করেন। আসলে, তিনি চেয়েছিলেন, শুভেন্দুর দিল্লির যোগাযোগ কেটে ফেলতে (‌সেইসময় বেঙ্গল টাইমসে বেশ কিছু লেখা ছাপা হয়েছিল)‌। মাঝে মাঝেই জল্পনা ছড়াচ্ছিল, বিজেপি শীর্ষনেতাদের সঙ্গে শুভেন্দু, শিশিরবাবুদের কথা চলছে। কতটা সত্যি, কতটা মিথ্যে, তা মমতা ব্যানার্জির অজানা নয়। তাই দিল্লি থেকে সরিয়ে নন্দীগ্রামের মাটিতে এনে ফেলা নিছক মন্ত্রী করার জন্য নয়। একটু তলিয়ে ভাবলেই আসল কারণটা বোঝা যাবে।

শুভেন্দু বরং ভাবুন, কেন তাঁকে নিয়েই বারবার জল্পনা ছড়ায়। কেন খোদ তৃণমূলের লোকেরাই তাঁকে বিশ্বাস করেন না। কেন তাঁকে মালদা, মুশিদাবাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে?‌ এ অনেকটা শত্রুকে বাঘ মারতে পাঠানোর মতো। হয়ত বাঘ মরবে, নয়তো শত্রু মরবে। যদি অধীরকে নিশ্চিহ্ন করা যায়, তাহলে তো ভালই। আর যদি সেটা না হয়, তাহলে প্রমাণ করা যাবে শুভেন্দুর আলাদা কোনও ক্যারিশ্মা নেই। আর শুভেন্দুর ক্যারিশ্মা নেই, এটা প্রমাণিত হলে কে সবথেকে বেশি খুশি হবেন?‌ ভাবুন, ভাবুন, ভাবা প্র‌্যাকটিশ করুন। সঠিক উত্তরের জন্য কিন্তু কোনও পুরস্কার নেই।

কিন্তু শুভেন্দু কি সত্যিই বিজেপিতে যাবেন?‌ তাঁকে এতখানি অপরিণত ভাবারও কোনও কারণ নেই। তিনি মাটি বোঝেন, তিনি হাওয়াও বোঝেন। বিজেপিকে গিয়ে বিধায়ক হতে বা বিরোধী দলনেতা হতে নিশ্চয় যাবেন না। যদি মনে হয়, বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারে, যদি তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী প্রোজেক্ট করে লড়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে কী হবে, বলা মুশকিল। শুভেন্দু যদি মনে করেন, তাঁর বিরাট মান সম্মান আছে (‌সারদা–‌নারদায় প্রত্যক্ষ নাম জড়ানোর পর সেটা কতটা আছে, বলা মুশকিল)‌, তাহলে তিনি বিপ্লব দেবের বিরুদ্ধে মামলা করতেই পারেন। কিন্তু তাতে জল্পনাটা থামবে না। বরং, আরও জোরদার হবে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.