ধীমান সাহা
ভারতে এক দুর্বল প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর নাম কী? নিশ্চয় বলে দিতে হবে না, মিডিয়ার প্রচারের ঝড়ে আপনার পাঁচ বছরের শিশুও হয়ত বলে দেবে, তিনি মনমোহন সিং।
ভারতে একজন দারুণ শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রী আছেন। যাঁকে সারা পৃথিবী ভয় করে। তাঁর নাম কী? আপনার ওই পাঁচ বছরের পুঁচকে ছেলেটাই হয়ত বলে দেবে, নরেন্দ্র মোদি।
একজন অল্প কথা বলতেন। আরেকজন সারাক্ষণ নিজের ঢাক পিটিয়েই চলেন। তাই যিনি অল্প কথা বলেন, তাঁকে দুর্বল মনে হয়। কিন্তু যিনি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে চলেন, তাঁকে সবল মনে হয়ে।
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে বোধ হয় অন্যরকম ছবিই উঠে আসবে। মনে করুন, ২০০৬ বিধানসভা নির্বাচনের কথা। মনে করুন ২০০৯ লোকসভা ও ২০১১ বিধানসভার কথা। এই তিনটি নির্বাচনের সময় দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং। মুখে হুঙ্কার ছিল না। কিন্তু প্রতিটি বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হয়েছিল। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকার মনে করেছিল, সুষ্ঠু ভোট করানোটা সরকারের দায়িত্ব।
অথচ, মোদিবাবু অনেকদিন ধরেই হুঙ্কার ছেড়েই যাচ্ছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের ভোটে আর কোনও সন্ত্রাস হবে না। বঙ্গীয় বিজেপি নেতৃত্বও বলে চলেছিলেন, লোকসভার ভোট হবে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে। সেখানে তৃণমূল কিছুই করতে পারবে না।
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কী দেখা গেল? কোচবিহারের বিভিন্ন এলাকায় তুমুল সন্ত্রাস, রক্তারক্তি। দ্বিতীয় দফাতেও শিক্ষা হল না। চোপড়া যেন রণক্ষেত্র হয়ে উঠল। রায়গঞ্জ লোকসভার বিভিন্ন এলাকায় চলল বুথ দখল, ছাপ্পা। মিডিয়া আর কটা জায়গাতেই বা পৌঁছতে পেরেছে! সম্ভবও নয়। প্রায় ২ হাজার বুথ। মিডিয়া বড়ডোর পাঁচ–ছটা বুথে পৌঁছতে পেরেছে। সেগুলিতেও মিডিয়া আসছে শুনে আগাম সজাগ হওয়ার সুযোগ পাওয়া গেছে। অপকর্ম ঢেকে ফেলার পর্যাপ্ত সময় পাওয়া গেছে। আর যদি ক্যামেরায় ধরা পড়েও যায়, ধমকানো, চমকানো তো আছেই।
সহজ কথা, যে পরিমাণ ছাপ্পা হয়েছে, তার এক শতাংশও ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। বাহিনী নেই শুনে প্রবল উল্লাসে ছাপ্পার চাষ হয়েছে। আর যেখানে বাহিনী ছিল, তাঁরাও তো বুথেই মোতায়েন ছিলেন। রাস্তায় বা গ্রামে যে লোকজনকে আটকে দেওয়া হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে যেতেই দেওয়া হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন নামক বস্তুটি তেমন কিছুই করে উঠতে পারল না। কেন্দ্রীয় সরকার নামক বস্ততিও কার্যত অসহায় হয়ে থাকল।
মনমোহন ‘দুর্বল’ ছিলেন। কিন্তু সব বুথে বাহিনীর ব্যবস্থা করতে পেরেছিলেন। শান্তিতে ভোট করাতে পেরেছিলেন। আর ছাপ্পা রুখতে পেরেছিলেন। আর একজন প্রবল প্রতাপশালী। কিন্তু তিনি না পারলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যবস্থা করতে। না পারলেন ছাপ্পা ঠেকাতে। চিটফান্ড নিয়ে এত গলা ফাটালেন। কিন্তু পাঁচ বছরে সিবিআই নামক বস্তুটিকে কার্যত ঘুম পাড়িয়েই রাখলেন।
তাহলে, শক্তিশালী কে, আর দুর্বল কে? আরও একবার ঠান্ডা মাথায় ভাবুন।