হেমন্ত রায়
বিভিন্ন জেলায় যেন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে বিক্ষোভ। ভোটকর্মীরা জানাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকলে ভোট করতে যাওয়া সম্ভব নয়। একটি দুটি জেলায় শুরু হয়েছিল এই প্রতিবাদ। এখন উত্তরবঙ্গ–দক্ষিণবঙ্গ মিলেমিশে একাকার। প্রায় সব জেলাতেই ভোটকর্মীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। হ্যাঁ, এটা ঘটনা, সংবাদ শিরোনামে এই বিক্ষোভের কথা সেভাবে উঠে আসছে না। কেন আসছে না, সেটাও সহজেই বোঝা যায়।
অনেকে ভাবতে পারেন, এটা বোধ হয় কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিবাদ। কিন্তু গত কয়েকদিন দেখলাম, এটি আর কোনও দলের এজেন্ডা নয়। এমনকী যাঁরা তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরাও চাইছেন না এই অবস্থায় ভোটে যেতে। তাঁদেরও বাড়িতে বাবা–মা আছেন। স্ত্রী, পুত্র, পরিবার আছে। কর্মক্ষেত্রে আমাদের সবাইকেই কিছু না কিছু আপোস করতে হয়। ইচ্ছে না থাকলেও অনেককেই তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনে বা সরকারি কর্মচারি সংগঠনে যোগ দিতে হয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিগত আলাপচারিতার সূত্রে বেশ বুঝতে পারি, এটা ওঁদের বাধ্যবাধকতা। কিছু কিছু স্কুলের এমনই করুণ পরিস্থিতি যে, আপনি তৃণমূলের ঝান্ডা না ধরলে চাকরি করাই কঠিন। তাঁদেরও পঞ্চায়েত ভোটের ডিউটিতে যেতে হয়েছে। কেমন ভোট হয়েছে, সবাই নিজের চোখেই দেখেছেন। বাড়িতে এসে হয়ত বলেওছেন। সরকার বা প্রশাসন যতই নিজেদের ঢাক বাজান, ভোটের আসল ছবিটা কেমন, এই পরিবারগুলিও জানে।
তাঁরা হয়ত সামনে থেকে আন্দোলন করতে পারছেন না। কিন্তু তাঁরাও ভোটকর্মীদের এই দাবিকে সমর্থন করেন। প্রশাসন এখনও স্পষ্ট করে জানাতে পারছে না কী পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেই সব বুথে ঠিকঠাক ভোট হবে, এমনটাও মনে করি না। তবু একটা ভরসার জায়গা থাকবে। যেখানে সেখানে লেঠেল বাহিনীরা ঢুকে পড়তে পারবে না। ভোটদাতারা একটু হলেও স্বস্তি পাবেন। মানছি, সারা দেশে ভোট হচ্ছে। চাইলেও সব বুথে হয়ত বাহিনী দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সরকারের আদৌ সদিচ্ছা আছে তো? সেটাই সবথেকে বড় প্রশ্ন। রাজ্য সরকারের হাতে এই ভোটের ভার ছেড়ে দিলে নিশ্চিত থাকুন, সব বুথেই সিভিক ভলান্টিয়ার আর হোমগার্ড দিয়ে ভোট করিয়ে নিত। আসলে, সরকার নিজেই যখন অবাধ ছাপ্পা চায়, তখন গণতন্ত্র এভাবেই ধর্ষিত হয়।
ক্ষমতাসীন দল যে অধিকাংশ বুথেই মস্তানি চায়, এ নিয়ে কোনও সংশয় নেই। বিভিন্ন জেলা প্রশাসন যে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে, এ নিয়েও কোনও সন্দেহ নেই। আটকানো তো দূরের কথা, বরং কীভাবে এই লুঠকে আরও মসৃণ করা যায়, সেই চেষ্টায় ব্যস্ত থাকবে জেলা প্রশাসন। পঞ্চায়েত ভোটে সেই ছবিটাই নগ্নভাবে দেখা গেছে। না, কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। প্রতিটি ব্লকই ছিল প্রবলভাবে সন্ত্রাস কবলিত। এমন একটি ব্লকও পাওয়া যাবে না যেখানে বিরোধীরা সব আসনে মনোনয়ন দিতে পেরেছে। এমন একটি ব্লকও পাওয়া যাবে না যেখানে অবাধে ভোট হয়েছে।
এই অবস্থায় জেলা প্রশাসন আশ্বস্ত করছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকলেও নিরাপত্তা থাকবে। আচ্ছা বলুন তো, এই চাটুকার জেলাশাসক বা এসপিদের ভরসা করার কোনও কারণ আছে? একজনও ডিএম বা এসপি আছেন যাঁর ওপর ভরসা রাখা যায়! তাঁদের সবিনয়ে একটা কথাই বলতে চাই, আগে ভরসার যোগ্য হয়ে উঠুন, তারপর ভরসা দেবেন।