হেমন্ত রায়
এত উদ্যোগের পরেও জোট শেষমেষ ভেস্তেই গেল। দু পক্ষই অহেতুক জেদাজেদির রাস্তা নিলেন। কংগ্রেসের দিক থেকে যুক্তিহীন জেদটা একটু বেশি। কিন্তু বামেরাও আরেকটু ধৈর্য দেখালে পারতেন।
প্রথমত, জোট আলোচনা শুরুই হয়েছিল অনেক দেরিতে। সত্যিই যদি জোট করতে হত, তাহলে অনেক আগে থেকে সেই আলোচনা শুরু করা দরকার ছিল। কেন বারবার কথায় কথায় রাহুল গান্ধীকে হস্তক্ষেপ করতে হবে? কেন বারবার সীতারাম ইয়েচুরিকে জট ছাড়াতে হবে? দুই দলের শীর্ষনেতৃত্ব ছাড়পত্র দিয়েছিলেন। এরপর সেই আলোচনা তো রাজ্যস্তরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা। সেই রফাসূত্র খুঁজতে বারবার তাঁরা ব্যর্থ হলেন। তাই বারবার জল গড়াল দিল্লিতে।
জোট হওয়া মানে কি শুধু বাম আর কংগ্রেসের ভোট যোগ হওয়া? ভোটের অঙ্কটা পার্টি গণিত নয়। এখানে দুই আর দুই মিলে অনেক সময় ছয় বা সাতও হতে পারে। অনেকে বলেন, কংগ্রেসের ভোট বামে আসে না। নাই বা এল। কিন্তু কং–বাম জোট হচ্ছে শুনলে, এমন অনেক ভোট এসে যেত যেগুলো হয়ত বাম বা কংগ্রেস কারও ভোট নয়। দেখা যাচ্ছে, গত লোকসভার ক্ষেত্রে বাম ও কং ভোট মিলে যতখানি ভোট, বিভিন্ন বিধানসভায় তার থেকেও বেশি ভোট পেয়েছেন বাম বা কং প্রার্থীরা। এটা কীভাবে হল? কারণ, লোকসভায় যাঁরা বাম বা কংগ্রেসকে দেননি, তাঁরাই জোট হওয়ার পর ভরসা রেখেছেন।
জোট হলে কংগ্রেস হয়ত একটু বেশি আসন পেত। হয়ত বামেদের থেকে বেশিই পেত। হয়ত দেখা গেল, কংগ্রেস পাঁচটি আসনে, বামেরা তিনটি আসনে জিতল। অন্তত এই আটটি আসনে তৃণমূলকে তো হারানো যেত। অন্তত তিরিশ আসনে দ্বিতীয় তো থাকা যেত। শূন্য হওয়ার থেকে তো তিন পাওয়া ভাল। অনেক কেন্দ্রেই লড়াইয়ের পরিবেশ তৈরি হত। যা ভেস্তে গেল জোট না হওয়ায়।
আবার বলব, দায়ী মূলত কংগ্রেস। কিন্তু বামেরাও আরেকটু ধৈর্য দেখাতে পারতেন। যা হল, তাতে শুধু তৃণমূলেরই সুবিধা হল। আরও কয়েকটা আসন তাদের উপহার দেওয়া হল। এর জন্য একদিন আক্ষেপ করতে হবে।