উত্তম জানা
কয়েকদিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল একটি খবর। সঙ্গে ওয়েব সাইটের লিঙ্ক। সত্যি কথা বলতে গেলে, পুরোটা বিশ্বাস করিনি। মনে হয়েছিল, এটা ফেক নিউজ। ভোটের আগে এমন অনেক ফেক নিউজ ও লিঙ্ক ঘোরাফেরা করে। এটা হয়ত তেমনই কিছু।
কিন্তু কোনও এক পিসির কোনও এক ভাইপোর সাংবাদিক সম্মেলনের পর নিশ্চিত হওয়া গেল, বিষয়টি নিছক ফেক নয়। ভাইপোর সব দাবিকেই যদি সত্যি বলে ধরে নিই, তাহলেও এটা তো পরিষ্কার, অনেক কিছুই ঘটেছিল। কোনও এক ভাইপো অনেকগুলি প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু অনেক পাল্টা প্রশ্নও যে উঠে আসছে।
১) সত্যিই তো, কাস্টমস সাতদিন পর অভিযোগ জানাল কেন? কেন পরের দিনই অভিযোগ জানাল না?
২) পুলিশ ছাড়ার অনুরোধ করল, মেনে নিলাম। কিন্তু কাস্টমসের কর্তারা ছেড়ে দিলেন কেন? ওপর তালর নির্দেশ ছাড়াই এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হল?
৩) ভাইপো চ্যালেঞ্জ করছেন, সিসি টিভি ফুটেজ দেখাতে। এয়ারপোর্টের মতো জায়গা, যেখানে প্রায় প্রতিটি ইঞ্চি সিসিটিভির নজরদারিতে, সেখানে সিসিটিভি দেখাতে সমস্যা কোথায়? ব্যাগে কী আছে, তা না হয় দেখা যাবে না। কিন্তু কজন পুলিশ, কীভাবে চাপ দিচ্ছিল, তা তো বোঝা যাবে। সেগুলি ভ্যানিস হয়ে যায়নি তো?
৪) পাঁচ বছর ধরে সারদা তদন্ত কেমন ঘোড়ার ডিম প্রসব করছে, সবাই জানে। নারদা নামক তদন্ত কেন হচ্ছে না, সবাই জানে। সেই সূত্র ধরেই সিসিটিভি ভ্যানিস করে দেওয়া হয়নি তো?
৫) ভাইপো যখন কাস্টমসের নামে সরাসরি ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ আনলেন, তখন কাস্টমসের তরফ থেকে কোনও প্রতিবাদ নেই কেন?
৬) যে রাজ্য বিজেপি সামান্য বিষয় নিয়ে এত হইচই করে, তারা এত বড় কাণ্ডের সাতদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও চুপচাপ কেন? দিল্লির বারণ আছে বুঝি?
৭) বঙ্গ মিডিয়া। টানা সাতদিন ধরে সবকিছু জানার পরেও কোথাও একটি শব্দও লেখা হয়নি। কোনও চ্যানেলে এক সেকেন্ডও দেখানো হয়নি। এমনকী কাস্টমসের এফআইআরের পরেও না। লেখা হল তখন, যখন কোনও এক ভাইপো বুক বাজিয়ে প্রেস কনফারেন্স করলেন। ভাইপোর বাণী অমৃতসমান। তিনি ঘটা করে প্রেস কনফারেন্স করেছেন, না লিখলে মুশকিল। অতএব লেখা হল, টিভিতে লাইভও হল। কিন্তু আগের নিরুত্তরতা। থরহরি কম্পমান রাজ্যে সেই নীরবতাই স্বাভাবিক। সেই নীরবতাও যে বুঝিয়ে দেয়, আসলে অনেককিছুই ঘটেছে। অন্য সময়ে তিল থেকে তাল হয়। আর এক্ষেত্রে, তালকে তিল করার ন্যূনতম সাহসটুকুও নেই।