বাম–‌কং জোট না হওয়ায় ক্ষতি হল বিজেপির

অনেকে বলতে শুরু করেছেন, বাম–‌কংগ্রেস জোট না হওয়ায় বিজেপির খুব লাভ হল। শহুরে চোখের বিশ্লেষণে এমনটাই হয়। আসলে, এঁরা ভোটের অঙ্কটাই বোঝেন না। গ্রামীণ বাস্তবতাও বোঝেন না। জোট না হওয়ায়, সবথেকে যার ক্ষতি হল, সে হল বিজেপি। লিখেছেন সরল বিশ্বাস।।

বাম ও কংগ্রেসের জোট না হওয়ায় কার লাভ হল?‌ বঙ্গজ মিডিয়ার একটা বড় অংশ দেখাতে চাইছে, এতে নাকি বিজেপির দারুণ লাভ হল। এর ফলে, তৃণমূল বিরোধী ভোট হু হু করে বিজেপির বাক্সে ঢুকে পড়বে।

আসলে, গত কয়েক বছর ধরে বিজেপি–‌কে তোল্লাই দিতে দিতে সবকিছুই গুলিয়ে ফেলেছেন মিডিয়া মতব্বররা। মুখ্যমন্ত্রী নিয়ম করে বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছেন। আসলে, তিনি ভাল করেই জানেন, ভোটে কাদের সঙ্গে মূল লড়াইটা হবে। সেই কারণেই তাঁকে হাওয়া ঘুরিয়ে দিতে হবে। বিজেপির দিকে তোপ দেগে, তাদের প্রাসঙ্গিক করতে হবে। তবে তৃণমূল বিরোধী ভোটের একটা অংশ বিজেপির দিকে চলে যাবে। এতে তৃণমূলের লাভ।

নিজের ভালটা তৃণমূল দিব্যি বোঝে। কিন্তু এই ফাঁদটা বঙ্গজ মিডিয়ার মাথারা বোঝেন না। তাই তাঁরাও বিজেপিকেই মূল বিরোধী ভেবে চলেছেন। সবকিছুতেই তাঁরা বিজেপির লাভ দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাই, জোট না হওয়াতেও বিজেপির লাভ দেখছেন। আসলে, কোন জেলার, কোন আসনের কী চরিত্র, এসব বোঝার দায় তাঁদের নেই।

জোট না হওয়ায় সবথেকে যার ক্ষতি হল, সেটা হল বিজেপি। বাম–‌কংগ্রেস জোট হলে নিশ্চিতভাবেই অধিকাংশ আসনে বিজেপি দ্বিতীয় হত। এবং বেশ কয়েকটা আসন পেয়েও যেতে পারত। কীভাবে?‌ অঙ্কটা খুব পরিষ্কার।

left front12

কংগ্রেসের জন্য যে আসনগুলি ছেড়ে রাখা হয়েছিল, তার মধ্যে যে কোনও একটি কেন্দ্র বেছে নেওয়া যাক। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক বাঁকুড়ার কথা।

এই কেন্দ্রে ২০১৪ সালে কোন দল কত ভোট পেয়েছিল, একবার দেখে নেওয়া যাক।
তৃণমূল— ৪ লাখ ৮৩ হাজার।
সিপিএম — ৩ লাখ ৮৫ হাজার।
বিজেপি — ২ লাখ ৫১ হাজার।
কংগ্রেস — ২২ হাজার।

হ্যাঁ, সাতটি আসন মিলিয়ে কংগ্রেসের ভোট ছিল ২২০২১। তাহলেই ভেবে দেখুন, এই আসন কংগ্রেসের জন্য ছেড়ে রাখা হয়েছিল। যে আসনে বামেদের ভোট কংগ্রেসের প্রায় ১৮ গুন, সেই আসনও কংগ্রেসকে ছেড়ে রাখা হয়েছিল।

ধরেই নিলাম, সিপিএমের সেই আগের শক্তি আর নেই। ৩ লাখ ৮৫ হাজার কমে ৩ লাখে দাঁড়িয়েছে। তাহলে, সেই তিন লাখ ভোট কোথায় যেত?‌

vote8

এই সাতটি বিধানসভায় মুসলিম ভোট খুব একটা নেই। ফলে, তৃণমূলের দিকে যাওয়ার তেমন সম্ভাবনা ছিল না। সহজ কথা, এই ভোটের বেশিরভাগটাই তৃণমূল বিরোধী। সিপিএম নেতৃত্বের এখন সেই সাংগঠনিক শক্তি নেই যে, এই তিন লাখ ভোট কংগ্রেসে ফেলাতে পারবেন। হয়ত একলাখ কংগ্রেসের বাক্সে ঢুকত। বাকি দুলাখের কাছাকাছি ভোট যেত বিজেপিতে। অর্থাৎ, বিজেপির আড়াই লাখের সঙ্গে এই ফোকটে পাওয়া দু লাখ যোগ করুন। সাড়ে চার লাখ। বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের বড় একটা অংশও যোগ হত বিজেপির দিকে।

তাহলে, লাভবান কে হত?‌ নিঃসন্দেহে বিজেপি। কিন্তু জোট না হওয়ায় বামের ভোট বামের ভোট যদি কমেও যায়, সেটা বামেই পড়বে। সেক্ষেত্রে ফোকটে পাওয়া ২ লাখ ভোট বিজেপির বাক্সে পড়ছে না। ক্ষতিটা কার হচ্ছে?‌

উদাহরণটা বাঁকুড়ার দেওয়া হল। কিন্তু যে সতেরোটি আসন কংগ্রেসের জন্য ছেড়ে রাখা হল, তার অধিকাংশ কেন্দ্রেই এমন ছবিটাই দেখা যেত। জোট না হওয়ায় তৃণমূল হয়ত কিছুটা লাভবান হতে পারে। কিন্তু বিজেপির লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

আবার যে কেন্দ্রগুলি বামেরা লড়ত, সেগুলিতে কংগ্রেসের ভোট কোথাও তিরিশ হাজার, কোথাও চল্লিশ হাজার। এবার তা কমে অর্ধেক হয়ে যাবে। ধরা যাক ৪০ হাজার। এর মধ্যে কতটা বামের দিকে আসত?‌ বড়জোর হাজার পাঁচেক। বাকিটা তৃণমূল বা বিজেপির দিকে যেত। অর্থাৎ, জোট করে বামেরা পাচ্ছে ৫ হাজার। অথচ, জোট না করে তৃণমূল বা বিজেপি পাচ্ছে অনেক বেশি।

তাই সবদিক থেকে দেখলে, এই জোট না হওয়াটা বামেদের পক্ষে বিরাট বড় এক আশীর্বাদ। জোট হলে অন্তত ৩০ টি কেন্দ্রে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে থাকত। কংগ্রেসের জন্য ছেড়ে রাখা কেন্দ্রগুলিতে দেন থেকে দু লাখ করে বাড়তি ভোট উপহার পেত।

অনেকে বলতেই পারেন, জোট না হওয়ায় তৃণমূলের লাভ হল। হ্যাঁ, সেটা আংশিক সত্যি। কিন্তু বিজেপির মোটেই লাভ হয়নি। এই সহজ অঙ্কটা বিজেপি নেতৃত্ব হয়ত বুঝছেন। কিন্তু বঙ্গজ মিডিয়া বাস্তব থেকে অনেক দূরে। তাই, তাঁরা এসব বুঝবেন না।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.