নির্মল দত্ত
বিজেপি নেতৃত্ব অনেকদিন ধরেই হুঙ্কার দিচ্ছেন, এবার নাকি তৃণমূলে বড়সড় ভাঙন দেখা দেবে। একে একে তারকারা নাম লেখাবেন বিজেপি শিবিরে। অনেকে ভেবেছিলেন, টিকিট না পেয়ে হুড়মুড় করে লাইন দিয়ে সবাই বিজেপিতে চলে যাবে। কিন্তু তেমন বড় মাপের ভাঙন দেখা গেল না।
ইতিপূর্বে তৃণমূল থেকে নানা মাপের নেতাই বিজেপিতে এসেছেন। কিন্তু এই প্রথম বড় মাপের ভাঙন ধরানো গেল তৃণমূল শিবিরে। অনুপম হাজরা বা সৌমিত্র খাঁ দলবদল করলে তৃণমূলে কোনও প্রভাবই পড়ার কথা নয়। হতেই পারেন, তাঁরা এখনও সাংসদ। কিন্তু নিজেদের এলাকায় তেমন কোনও প্রভাবই নেই। তাঁদের সঙ্গে একশোজনও আসবেন কিনা সন্দেহ আছে।
তবে অর্জুন সিং বিধায়ক হলেও বাকিদের তুলনায় তাঁর প্রভাব অনেক বেশি। কীভাবে তিনি বিধায়ক হলেন, সে অন্য প্রশ্ন। কিন্তু তৃণমূলে যদি নিজের এলাকায় পাঁচজনও প্রভাবশালী থেকে থাকেন, তাঁদের মধ্যে অর্জুন অবশ্যই একজন। দলের টিকিটে, অনুকূল হাওয়ায় এম পি, এম এল এ হওয়া সহজ। কিন্তু বছরের পর বছর পুরপ্রধান থাকতে গেলে ক্যারিশ্মা লাগে। সেটা শুধু দলের প্রতীকে হয় না। প্রায় দুই দশক ধরে ভাটপাড়া মানেই অর্জুন সিং, এরকম একটা ইমেজ তৈরি করতে পেরেছেন। ভিনরাজ্যে তাঁর যা প্রভাব, তৃণমূলের অন্য কোনও মন্ত্রী বা সাংসদেরও তা নেই। মনে রাখবেন, পাঁচশোজন অনুপম হাজরার যতখানি ক্ষমতা, একজন অর্জুন সিংয়ের ক্ষমতা তার থেকে অনেক বেশি।
অন্য কেউ বিজেপি–তে গেলে তৃণমূলের তেমন চিন্তার কারণ ছিল না। কিন্তু অর্জুন সিং গেলে অনেককিছুই ওলট–পালট হয়ে যাবে। এটা বুঝতে পেরেই তাঁকে আটকানোর সাধ্যমতো চেষ্টা করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। শোনা যায়, ভোটের পরই তাঁকে ক্যাবিনেটে আনার আশ্বাসও দেওয়া হয়। তারপরেও অর্জুন যেভাবে বিজেপিতে গেলেন, সাহস লাগে বইকি। নিজের ওপর আস্থা না থাকলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত না।
তাই, এখনও পর্যন্ত বিজেপিতে আসা সবথেকে কার্যকরী নাম অর্জুন সিং। এর থেকে বড় নাম আর কেউ আসবে বলে মনে হয় না। এতদিন অর্জুন জিতেছেন, নিজের রাজ্যপাট বিস্তার করেছেন। কিন্তু দলের প্রতীক ছাড়া, তাঁর নিজের ক্যারিশ্মা কতটা, এবারই বোঝা যাবে।