ধীমান সাহা
জোটের জট এত সহজে ছাড়ার নয়। অনেকে ভাবছেন, রায়গঞ্জ আর মুর্শিদাবাদ নিয়ে রাহুল গান্ধী নির্দেশ দেওয়ায় জট বোধ হয় কেটে গেল। কিন্তু এত সহজে এই জট কাটার নয়। আজগুবি বায়না এত সহজে থামবে বলেও মনে হয় না।
আসলে, রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব বোধ হয় বুঝতেই পারছেন না, তাঁদের পায়ের তলার মাটিটা কতটা আলগা। হ্যাঁ, তিন বছর আগের বিধানসভা ভোটের নিরিখে তাঁরা বামেদের চেয়ে বেশি আসন পেয়েছিল। কিন্তু নিজেদের সংগঠনের জোরে লড়লে সেই আসন সংখ্যা পনেরো ছাড়াত কিনা সন্দেহ। কংগ্রেস যদি একশোটা ভোট পেয়ে থাকে, বেশিরভাগ জায়গায় তার মধ্যে আশিটা বামেদের। যে আব্দুল মান্নান বিরোধী দলনেতা হয়েছেন, ২০১৪–র লোকসভাতে চাঁপদানি থেকে কত ভোট পেয়েছিলেন? মাত্র পাঁচ হাজার। অধিকাংশ বিধায়কেরই নিজের কেন্দ্রে প্রায় এমনই দশা। পাঁচ হাজার বা দশ হাজার। অথচ, তাঁরা কিনা বিধানসভায় এক লাখের ওপর ভোট পেলেন! কোত্থেকে এল এই ভোট, একবারও ভেবেছেন?
বিধানসভায় কংগ্রেসের টিকিটে ৪৪ জন জিতেছিলেন ঠিকই, কিন্তু এখন কজন টিকে আছেন? কংগ্রেস নেতারাও জানেন না। যাঁরা আছেন, তাঁরাও কদিন থাকবেন, সন্দেহ আছে।
তাহলে এই কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের জন্য বাম নেতৃত্ব এত মরিয়া কেন, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। রায়গঞ্জ আর মুর্শিদাবাদ নিয়ে তাঁরা যে আজগুবি আবদার করে গেলেন, তা সত্যিই তাঁদের নাবালকত্ব আরও একবাক সামনে এনে দিল। এমনি পরিস্থিতি যে, শেষপর্যন্ত রাহুল গান্ধীকে হস্তক্ষেপ করতে হল। এরপরেও আসন নিয়ে বায়না থামবে না। ১৭–১৮ খানা আসন দাবি করে বসবে। এই মুহূর্তে কংগ্রেস যদি নিজেদের জোরে লড়তে চায়, অন্তত তিরিশ আসনে কংগ্রেসকে চতুর্থ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এবং এই তিরিশটি আসনে জামানতটুকুও রক্ষা হবে না। সেই কংগ্রেস এতরকম বায়না করে চলবে, আর সেটাই মেনে নিতে হবে!
এখনও সময় আছে, জোটের মরীচিকা ছেড়ে বেরিয়ে আসুক বামেরা। নিজেদের শক্তিতেই লড়াই করুক। কংগ্রেসকেও তাদের আসল শক্তি বুঝিয়ে দেওয়া হোক।