জোটের মরীচিকা ছেড়ে এবার প্রস্তুতি শুরু করুন

জয় সরকার

জোটের মরীচিকা থেকে এখনও যেন বেরিয়ে আসতে পারছেন না বাম নেতৃত্ব। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে জোট নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। কেউ বলছেন জোট, কেউ বলছেন বোঝাপড়া, কেউ বলছেন আসন সমঝোতা। যত সময় গড়িয়েছে, ধোঁয়াশা আরও বেড়েছে। শরিকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। খোদ সিপিএম দলের মধ্যেও বিষয়টা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।

কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হলেই বা কী হত?‌ কংগ্রেস হয় দুটো বা তিনটে আসন পেত। কিন্তু বামেরা কটা আসন পেতে পারত?‌ নিশ্চিতভাবে একটা আসনও কি বলা যায়?‌ ব্যাপারটা অনেকটা জাতও গেল, কিন্তু পেটও ভরল না গোছের হত। ধরা যাক, কংগ্রেসের ডালু বাবু জিতলেন। কী লাভ হত?‌ যে ডালুবাবু কয়েকদিন আগেও তৃণমূলের সঙ্গে জোট চেয়ে একেবারে তৃণমূল মহাসচিবের বাড়ি হানা দিয়েছিলেন, যে ডালু বাবু সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যে তিনি তৃণমূলে যাবেন না, সেই ডালু বাবুকে জেতানোর জন্য এই জোট?‌ ধরা যাক, জঙ্গিপুরে অভিজিৎ মুখার্জি। যতদূর শোনা যায়, এমনিতেই তাঁকে জেতানোর দায়িত্ব তৃণমূলই নিয়ে বসে আছে। কোনও এক বিশেষ প্রভাবশালী মারফত নাকি বার্তা এসেছে, প্রণববাবুর ছেলের বিরুদ্ধে দুর্বল প্রার্থী দিতে হবে। যতদূর সম্ভাবনা, কোনও একজন দুর্বল প্রার্থীই দেওয়া হবে। তাছাড়া, এই অভিজিৎ মুখার্জিকে গত পাঁচ বছরে তৃণমূলের সেভাবে সমালোচনা করতে দেখা যায়নি।

left front12
হ্যাঁ, অধীর ধারাবাহিকভাবে লড়াই করে এসেছেন। কিন্তু অদ্ভুত গোঁ ধরে বসে আছেন। মুর্শিদাবাদের তিন আসনে নাকি কোনও জোট হবে না। তিনটেই নাকি কংগ্রেসকে ছাড়তে হবে। এবং, এর মধ্যে প্রার্থী ঘোষণাও করে দিয়েছেন। যে আসনে বামেরা জিতেছিল, সেই আসনও ছাড়তে হবে!‌ কংগ্রেস দ্বিতীয় হয়েছিল বলে এত জোরালো দাবি, কিন্তু সিপিএম যে প্রথম হয়েছিল, তার দাবি থাকবে না?‌ রায়গঞ্জের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা প্রযোজ্য। সিপিএমের জেতা আসন। গত পাঁচ বছর ধরে মহম্মদ সেলিম ধারাবাহিকভাবে রায়গঞ্জে পড়ে আছেন। তিনি না দাঁড়িয়ে ওই আসন দীপাকে ছাড়তে হবে?‌
জোট মানে যত আত্মত্যাগ সিপিএম–‌কেই করতে হবে?‌ কংগ্রেস যদি সত্যিই জোটের ব্যাপারে আন্তরিক হত, তাহলে অন্তত বাস্তবসম্মত দাবি করত। মুর্শিদাবাদ ছেড়ে দিতেই পারত। রায়গঞ্জ সেলিমকে ছেড়ে, দীপাকে উত্তর মালদা থেকে প্রার্থী করাই যেত। কিন্তু সবাই কম–‌বেশি গোঁয়ার্তুমিতে আক্রান্ত। আগেরবার জোট করতে গিয়ে সবথেকে বেশি মাশুল দিতে হয়েছে বামফ্রন্টকেই। যে কংগ্রেস দশটা আসন পেত কিনা সন্দেহ, তারা হয়ে গেল মূল বিরোধী দল। কংগ্রেস থেকেই হল বিরোধী দলনেতা। এমনকী বিরোধী হুইপ, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যানও কংগ্রেস থেকে।

left front13
এত শিক্ষার পরেও কেন জোট নিয়ে এত আগ্রহ?‌ জোট যদি হয়ও, কংগ্রেসের ভোট কি বামেদের বাক্সে আসবে?‌ কংগ্রেসের কি সত্যিই সেই শক্তি আছে?‌ আসনের বিচারে কংগ্রেস যতই ৪ হোক, ভোট কিন্তু ছিল মাত্র ৮ শতাংশ। এখন সেটা কমে নিশ্চিতভাবেই ৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। যেটুকু শক্তি ছিল মালদা ও মুর্শিদাবাদে। সেখানেও সংগঠন একেবারেই ধাক্কা খেয়েছে। অধীর ছাড়া আর কারও জেতার কোনও সম্ভাবনা নেই। এমনকী তৃতীয় হওয়াও মুশকিল। ৪২ টা আসনের মধ্যে প্রথম বা দ্বিতীয় তো দূরের কথা, কটা আসনে কংগ্রেস তৃতীয় হবে?‌ তাহলে সেই কংগ্রেসের এত অদ্ভুত দাবি মানার কী যুক্তি আছে?‌ বিষ্ণুপুর বা আরামবাগ বা কাঁথিতে কংগ্রেসের সমর্থনে বাম প্রার্থী জিতবেন, এমন স্বপ্ন কারা দেখছেন?‌ যেখানে কংগ্রেসের সামান্য শক্তি আছে, সেখানেই যদি আসন না ছাড়ে, তাহলে অন্য জায়গায় ছেড়েই বা লাভ কী?‌
তাই একজন বাম সমর্থক হিসেবেই মনে করি, বামদের একাই লড়াই উচিত। কংগ্রেসের আসল শক্তি কতটা, সেটা কংগ্রেস নেতাদেরও একটু বোঝা দরকার। একইসঙ্গে বামেদেরও বোঝা দরকার, তাদের একার শক্তি কতটা। হয়ত কোথাও কোথাও থার্ড হতে হবে। হোক না, ক্ষতি কী?‌ তবু নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে লড়াই করাই ভাল। তাই জোটের মরীচিকা ছেড়ে এখন থেকেই নিজেরা লড়াই করার জন্য প্রস্তুতি নিন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.