রজত সেনগুপ্ত
বাঙালির এত বীরত্ব, সোশ্যাল মিডিয়া না থাকলে জানাই যেত না। অবশ্য, শুধু বাঙালি কেন, সারা দেশেই পাইকারি রেটে দেশপ্রেম বিক্রি হচ্ছে। জাতীয় চ্যানেল তো খোলাই যায় না। সারাক্ষণ যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। এত জওয়ান মারা গেলেন, এটাও যেন মোদির কৃতিত্ব। মোদি পাল্টা কী করবেন, কীভাবে জবাব দেওয়া হবে, তা পরে দেখা যাবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যা ঘটল, তাতে মোদির কৃতিত্বটা কোথায়, বোঝা যাচ্ছে না।
হ্যাঁ, ভোটের আগে তাঁকে যুদ্ধ যুদ্ধ হাওয়া খেলতেই হবে। তিন রাজ্যে হারের পর এছাড়া আর কোনও রাস্তাও নেই। যুদ্ধের জিগিরই পারে সব ব্যর্থতা ঢেকে দিতে। এই সহজ সত্যিটা বিজেপি বুঝেছে। তাই চ্যানেলগুলোকে কাজে লাগিয়ে যুদ্ধের জিগির তোলা হবে। একবারও ভেবে দেখছেন না, এইসব চ্যানেল কাদের টাকায় চলছে? অধিকাংশ জাতীয়স্তরের চ্যানেলই নগ্নভাবে একপেশে। ঠিক যেভাবে আমাদের রাজ্যের অধিকাংশ কাগজ বিশেষ একজনকে খুশি করতে ব্যস্ত, জাতীয় মিডিয়াও অন্য কাউকে খুশি করতেই ব্যস্ত। সঙ্গে আছে সোশ্যাল মিডিয়া। সেখানেও কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে হাওয়া তোলা হচ্ছে। ঢুকে যাচ্ছে ফেসবুকের ওয়ালে বা হোয়াটসঅ্যাপে। লোকে ভেবে নিচ্ছেন, তিনি কতই না গুরুত্বপূর্ণ, তাঁর কাছে মেসেজ আসছে। বুঝতে পারছেন না যে, এমন মেসেজ আরও হাজার হাজার লোকের কাছেই আসছে।
অনেকে পারলে যুদ্ধে নেমে পড়েন আর কী! মেনে নিলাম, আপনি বীর পুরুষ। এবার বলুন তো, পঞ্চায়েতে বা পুরসভায় নিজের ভোটটা নিজে দিতে পেরেছেন? সারা রাজ্যে কুড়ি শতাংশ মানুষও ভোট দিতে পেরেছেন কিনা সন্দেহ। কেন দিতে পারলেন না? কার জন্য পারলেন না? সব জেলায় তো আর অনুব্রত মণ্ডল নেই। কিন্তু প্রায় সব ব্লকেই তো ‘উন্নয়ন’ দাঁড়িয়েছিল। ব্লক অফিসে, রাস্তায়, পাড়ায়, ভোটকেন্দ্রে। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন? পাড়ার সেই ‘উন্নয়ন’দাদাটির বিরুদ্ধে কখনও একটি কথাও বলেছেন? কখন তো দাঁত কেলিয়ে দিব্যি হাসেন। জঙ্গির সঙ্গে পরে লড়বেন মশাই। আগে কেন ভোট দিতে পারেননি, সেটা ভাবুন। সত্যিই যদি বীর পুরুষ হন, তাহলে আগে নিজের পাড়ায় বীরত্ব দেখান। তার পরে না হয় সীমান্তে যাওয়ার কথা ভাববেন।