সংবিধানের আত্মকথা

(সাধারণতন্ত্র দিবসে রইল সংবিধানের আত্মকথা। জন্মের ৬৯ বছর পর কী বলতে চায় আমাদের সংবিধান?‌ কেন্দ্র, রাজ্য, পঞ্চায়েত সব জায়গায় সে নির্যাতিত। সেই নির্যাতনের কথা যেন নিজের মুখেই বলতে চাইছে আমাদের সংবিধান।)‌

ওরে, আমাকে এবার রেহাই দে।
আমার নামে যে যা পারছে, করে যাচ্ছে। এই ৬৯ বছর বয়সে এত ধকল আর নিতে পারছি না। রোজ রোজ এত হেনস্থা কার ভাল লাগে?‌
দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই আমাকে নিয়ে কতই না টানা হ্যাঁচড়া। আমার চরিত্র কী হবে?‌ কত বিতর্কের ঝড় উঠে গেছে। বেচারা আম্বেদকর সাহেব নাস্তানাবুদ হয়ে গিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের আদলে নাকি আমেরিকার আদলে?‌ আচ্ছা, রাশিয়ার কিছু দিক নিলে কেমন হয়?‌ তার সঙ্গে আবার মেশাতে হবে ভারতীয় সনাতন ঐতিহ্য। তার মানেটা কী দাঁড়াল?‌ জিরাফের গলাটা লম্বা, তাই তার গলাটা নাও। ঘোড়া ভাল দৌড়তে পারে, তার পা গুলো নাও। মানুষের বুদ্ধি বেশি, তার মাথাটা নাও। কুকুরের ঘ্রাণশক্তি ভাল, তার নাকটা নাও।

atmakatha

এইসব করতে গিয়ে একটা বকচ্ছপ ব্যাপার তৈরি হয়েছিল। এতবার সংশোধন হয়েছে, তবু খেদ মিটছে না। তারপরেও যে যার মতো করে ছেলেখেলা করে যাচ্ছে।
শপথ নেওয়ার সময় আমার নামে শপথ নিচ্ছে। বলছে, সংবিধান মেনে চলব। কোনও পক্ষপাত করব না। ওই বলাই সার। যে যা পারছে, করে যাচ্ছে। আদালতে বছরের পর বছর লেগে যাচ্ছে। মানুষ তো তবু আদালতে ছুটতে পারে, মিডিয়ার কাছে ছুটতে পারে। আমি কার কাছে ছুটব?‌
শোনা যায়, যে যত আইনের ফাঁক খুঁজে বের করতে পারে, সে ততবড় আইনজীবী। ঠিক তেমনি যে যত সংবিধানের ফাঁক খোঁজে, সে ততবড় সংবিধান বিশারদ। কেন্দ্র থেকে রাজ্য, জেলা থেকে পঞ্চায়েত, সব জায়গায় এক ছবি। কেউ একা একাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছে। এমনকি নিজের মন্ত্রীদেরও পাত্তা দিচ্ছে না। কেউ মনে সুখে অন্য দল থেকে লোক ভাঙিয়ে নিয়ে চলে আসছে। বলছে, সবাই নাকি উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে সামিল হয়েছে। দলত্যাগ বিরোধী একটা আইন আছে বটে, সেটাকে ঠুঁটো জগন্নাথ করেই রাখা হয়েছে। এক দলের নির্বাচিত বিধায়ক কী অবলীলায় অন্য দলে চলে যাচ্ছে। আর শাসক দল তাদের নিয়েও নিচ্ছে!‌ কারও কোনও চক্ষুলজ্জাটুকুও থাকছে না। পুলিশ কী অবলীলায় প্রমাণ লোপাট করে দিচ্ছে। তারই আবার প্রোমোশন হয়ে যাচ্ছে। শপথ নেওয়া হয়, পক্ষপাতিত্ব করব না। কিন্তু প্রতিটি পদক্ষেপেই নির্লজ্জ পক্ষপাত। তদন্ত টদন্ত যা হয়, লোকদেখানো। ইচ্ছেমতো শুরু হয়, আবার উপর থেকে সেটিং হলে তারাও শীতঘুমে চলে যায়। কেউ আর সংবিধানের পরোয়া করে না।

constitution
তাই বলছিলাম, তোরা যখন আমাকে মানবি না ঠিক করেই নিয়েছিস, তখন আমাকে মুক্তি দে। চুলোয় যাক পৃথিবীর সবথেকে দীর্ঘতম লিখিত সংবিধান। তোরা বরং হনুমান চালিশাই পড়েই শপথ নে। তোদের জন্য ওটাই ভাল।

(‌বেঙ্গল টাইমসে শুরু হল নতুন বিভাগ— আত্মকথা। ব্যক্তির আত্মকথা হতে পারে, প্রতিষ্ঠানের আত্মকথা হতে পারে। আপাতত সপ্তাহে তিনদিন। আপনারাও এই আত্মকথা সিরিজে লেখা পাঠাতে পারেন। ঠিকানা:‌ bengaltimes.in@gmail.com)‌

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.