অজয় কুমার
আবার বোর্ড গঠন স্তব্ধ হয়ে গেল কেশিয়ারিতে। পশ্চিম মেদিনীপুরের এই ব্লকে এবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল বিজেপি। গ্রাম পঞ্চায়েত দখল এক ব্যাপার। কিন্তু পঞ্চায়েত সমিতিতে জেতার তাৎপর্য অনেক বেশি। টিভি চ্যানেলের রাজনৈতিক চর্চা দেখে যাঁদের রাজনৈতিক হাতেখড়ি, তাঁরা বুঝবেন না। কিন্তু গ্রাম রাজনীতি সম্পর্কে যাঁদের কিছুটা ধারনা আছে, তাঁরা বুঝবেন।
রাজ্যের অধিকাংশ জায়গায় কার্যত বিনা লড়াইয়ে জয়। ভোট হলেও অধিকাংশ জায়গায় নির্লজ্জ প্রহসন। তার পরেও কেশিয়ারি পঞ্চায়েত সমিতি পেয়েছিল বিজেপি। ৩৩ আসনের মধ্যে বিজেপি ১৭, তৃণমূল ১৬। টানা কয়েকমাস ধরে চলল ভাঙন ধরানোর কাজ। কিন্তু কাউকেই ভাঙিয়ে আনা গেল না। আগস্টে বোর্ড গঠনের তারিখ দেওয়ার পরেও তা ভেস্তে গেল। কারণ, সেখানে নাকি আইন শৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে। জানুয়ারিতে ফের বোর্ড গঠনের বিজ্ঞপ্তি। এবার আসরে নামলেন শুভেন্দু অধিকারী। তাও কাউকে ভাঙানো গেল না। অতএব, ভোটের দিন জানা গেল, আবার বোর্ড গঠন স্থগিত। কারণ, এবারও নাকি আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে।
ফের একবার নিজেদের দেউলিয়া মনোভাব প্রকাশ করে ফেলল শাসক দল। জেলা প্রশাসনও বুঝিয়ে দিল, তাঁদের ওপর ভরসা রাখার কোনও কারণ নেই। কারণ, প্রশাসন চালানোর মতো কোনও বিশ্বাসযোগ্যতাই তাঁদের নেই।
১) ঝামেলা কারা করে? যারা জিতে যায়, তারা নিশ্চয় ঝামেলা চাইবে না। তার মানে, যারা হারতে চলেছে, তারাই ঝামেলা পাকাবে। এক্ষেত্রে তৃণমূলই ঝামেলা পাকাবে। তাহলে, প্রশাসন কার্যত স্বীকার করে নিল, তৃণমূল হারলে ঝামেলা হবে। শাসক দলের প্রতি কতটা অনাস্থা, তা কি নেতৃত্ব বুঝলেন?
২) বিরোধীরা সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলে, তারা বোর্ড গড়তে পারবে না। রাজ্য প্রশাসনের কাছে এটা ভাল বিজ্ঞাপন? এরপর গণতন্ত্র নিয়ে কোনও কথা বলার নৈতিক অধিকার থাকে?
৩) নিছক একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্যাপার নয়। আস্ত একটি ব্লকের ব্যাপার। সেখানে বিরোধীরা সংখ্যা গরিষ্ঠতা সত্ত্বেও বোর্ড গড়তে পারছে না। এটা মুখ্যমন্ত্রী জানেন না? যিনি রাজ্যের এত খোঁজ রাখেন বলে দাবি করেন, বিষয়টি তাঁর অজানা থাকতে পারে না। অর্থাৎ, এখানেও অদৃশ্য ‘অনুপ্রেরণা’ কাজ করতেই পারে।
৪) বিজেপি নেতৃত্ব এতবড় একটা বিষয়কে প্রচারের আঙিনায় আনতেই পারলেন না। কেশিয়ারিতে বন্ধ হল। কজন জানতে পারল? এত প্রলোভন সত্ত্বেও একজন সদস্যকেও কেনা গেল না। সেই জয়ী সদস্যদের কলকাতায় ডেকে এনে সংবর্ধনা দেওয়া যেত না? কীভাবে তাঁদের ওপর চাপ তৈরি করা হয়েছে, এই কথাটা তো তাঁরা কলকাতায় এসে বলতে পারতেন। কিছু মানুষ অন্তত জানতে পারত।
৫) বিজেপি বোর্ড গড়লেও পরে অনাস্থা এনে সরিয়ে দেওয়াই যেত। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যুমেরাং হয়েছে তৃণমূল সরকারের তৈরি আইন। এখন আর আড়াই বছরের আগে অনাস্থা আনা যাবে না। নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে রক্ষা পেতে এই আইন করেছিল তৃণমূল। সেই আইনের জালে নিজেরাই জড়িয়ে যাচ্ছে। একবার কোনওভাবে বিরোধীরা বোর্ড গড়ে ফেললে আড়াই বছরের আগে সরানো যাবে না। তাই, যেভাবেই হোক, বোর্ডগঠন আটকাও।
৬)মূলস্রোত মিডিয়ার কথা যত কম বলা যায়, ততই ভাল। এতবড় একটা নিন্দনীয় ঘটনা। এটা নিয়ে কোথাও কোনও সম্পাদকীয় বা পোস্ট এডিটোরিয়াল বেরোবে না। দায়সারা গোছের একটা খবর, তাও জেলা এডিশনে। হয়ত ন্যূনতম সৎসাহস নেই। অথবা, খবরটার গুরুত্বই বোঝেননি মিডিয়া কর্তারা। দুটোর যেটাই হোক, লজ্জার।