তাদেরই দলের পেছনে আমিও আছি

মনোজ মল্লিক

ব্রিগেডের প্রহর ঘনিয়ে আসছে। বাংলার নানা প্রান্ত থেকে অনেকেই মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্রিগেডে আসার। অনেক বাধা বিপত্তি আসবে। সেসবকে উপেক্ষা করেই লাখ লাখ মানুষ ভিড় জমাবেন। তৃণমূলের ব্রিগেডের সঙ্গে এই ব্রিগেডের অনেক ফারাক। তার মধ্যে একটা বড় ফারাক হল, সেই ব্রিগেডে যেতেই হবে, এরকম হুমকি শুনতে হয়েছিল। আর এই ব্রিগেডের ক্ষেত্রে ‘‌যাওয়া চলবে না’ এরকম হুমকি শুনতে হবে।
আমি যেহেতু প্রত্যক্ষ রাজনীতি করি না, তাই আমাকে হয়ত এসব হুমকি শুনতে হয়নি। কিন্তু গ্রাম–‌মফস্বল, ছোট শহরে অনেকের ওপরেই হুমকি নেমে আসবে, অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝতে পারি। আমি এর আগে কখনও বামেদের মিছিলে হাঁটিনি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিছু কিছু ভাষণ শুনেছি ঠিকই, কিন্তু আলাদা করে কোনও সমাবেশে যাইনি। এককথায় আমাকে মোটেই রাজনৈতিক কর্মী বলা যায় না। কিন্তু এবার আমি ঠিক করেছি, ব্রিগেডে যাব।

left front8
অনেকে ভাবতেই পারেন, আমার যাওয়া–‌না যাওয়ায় কী আসে যায়!‌ আমি গেলেই বা কী, না গেলেই বা কী?‌ আমিও এরকমই ভাবতাম। কিন্তু পরে মনে হল, নিরাপদ দূরত্বে থেকে শীতের রোদ গায়ে মেখে পিকনিক করা বা ছুটির দিনে মাংস ভাত খেয়ে জম্পেস শীত ঘুম দেওয়ার থেকে ব্রিগেডে যাওয়াই ভাল। জীবন থেকে কত দিন তো রোজ হারিয়ে যাচ্ছে। একটা দিন না হয় একটু অন্যরকম হোক। আমি হয়ত স্লোগান তুলব না। আমি হয়ত ইনকিলাব জিন্দাবাদ ধ্বনিতে গর্জেও উঠব না। আমি থাকব সেই লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে।
সত্যি কথা বলতে কী, বামেদের বেশ কিছু বিষয় আমারও ভাল লাগত না। মনে হত, একবার বদল হওয়া দরকার। কিন্তু সেই বদলের যে চেহারা দেখলাম, আমার মতো অনেকেরই মোহভঙ্গ হয়েছে। আরও অনেকের মতো আমিও মনে করেছিলাম, বিজেপি হয়ত সুশাসন আনতে পারবে। তাই চোদ্দ সালে মোদিবাবুর দলকেও ভোট দিয়েছিলাম। কিন্তু যত দিন গেল, বুঝতে পারলাম, এঁদের ওপর ভরসা করাও ছিল চরম মূর্খামি। এঁরা শুধু ধর্মের নামে একে–‌ওর সঙ্গে লড়িয়ে দেওয়ার কাজটাই পারে।

left front4

চায়ের দোকান থেকে বাসে–‌ট্রেনে কোথাও কর্মসংস্থানের আলোচনা নেই। সারাক্ষণ শুধু ঘৃণার আলোচনা। কে কত সস্তা নাটক করতে পারে, কে কত মিথ্যে বলতে পারে, দুই ম–‌এর যেন প্রতিযোগিতা চলছে। বামেদের একটা শিক্ষা–‌দীক্ষা ছিল, সুস্থ রুচি ছিল। মানুষগুলোকে দেখে ভরসা হত। সর্বোচ্চ স্তর থেকে কীভাবে মিথ্যের ফোয়ারা ছোটানো হচ্ছে, কীভাবে জবর দখলে অনুপ্রেরণা দেওয়া হচ্ছে, কীভাবে প্রশাসনকে ঠুঁটো জগন্নাথ করে রাখা হয়েছে, কীভাবে মিডিয়াকে তাঁবেদার বানানো হয়েছে, এটা বুঝতে আর বাকি নেই। তাই মনে হচ্ছে, আবার সেই পুরনো দিনগুলো ফিরে আসুক। বামেদের সঙ্গে অন্য কারও তুলনাই হতে পারে না।
সেই কারণেই আমি ব্রিগেড যাব। জানি, আমি যাওয়া–‌না যাওয়ায় কিছুই যাবে আসবে না। তবু বলতে পারব, তাদেরই দলের পেছনে আমিও আছি।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.