মজিদের হদিশ পেয়েও এই উদাসীনতা কেন?‌

মিডিয়া সমাচার

মজিদ বাসকারের সন্ধান পাওয়া গেল। তারপরেও কলকাতার মিডিয়া জগৎ কার্যত উদাসীন থেকে গেল। একটি কাগজে বেরিয়েছে, অতএব বাকিরা চেপে গেলেন। আসলে, নিজেদের দেউলিয়াপনাই আবার প্রকাশ করে ফেললেন। বেঙ্গল টাইমসের মিডিয়া সমাচার বিভাগে এই নিয়েই লিখলেন সরল বিশ্বাস।।

গত সপ্তাহে একটি খবর ছিল রীতিমতো আলোড়ন ফেলে দেওয়ার মতোই। প্রায় তিন দশক ধরে কত ক্রীড়া সাংবাদিক খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন মজিদ বাসকারকে। এত চেষ্টার পরেও হদিশ পাওয়া যায়নি একসময় কলকাতা মাতিয়ে এই ইরানি ফুটবলারকে। সেই ফুটবলারের হদিশ পাওয়া গেল। তাঁর সাম্প্রতিক ছবি পাওয়া গেল। তারপরেও কলকাতার মিডিয়া কী আশ্চর্যজনকভাবে নির্লিপ্ত রইল।

খবরের কাগজে অদ্ভুত একটা ট্রেন্ড হয়েছে। কোনও কাগজে কোনও খবর এক্সক্লুসিভ বলে বাকিরা সেটাকে গুরুত্বহীন বোঝাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যেন, চাইলে তারাও এটা করতেই পারত। ইচ্ছে করেই করেনি। গত কয়েক বছরে কত ক্রীড়া সাংবাদিক হন্যে হয়ে চেষ্টা করেছেন মজিদের সন্ধান পেতে। কিন্তু তাঁদের দৌড় ওই জামশিদ নাসিরি পর্যন্ত। তাই বেচারা জামশিদকেই বারবার সবাই জিজ্ঞেস করেছেন। তিনিও মজিদের হাল হকিকত ঠিকঠাক জানতেন না। তাই বিশেষ আলো ফেলতে পারেননি। বাংলার সাংবাদিককূলকে কার্যত হতাশ হতে হয়েছে।

mazid baskar

অবশেষে তাঁকে খুঁজে বের করলেন সংবাদ প্রতিদিনে সাংবাদিক দুলাল দে। গিয়েছিলেন দুবাইয়ে এশিয়ান কাপ কভার করতে। সেখানে এক ইরানি এজেন্ট মারফত যোগাযোগ করেন মজিদের সঙ্গে। যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই সংবাদ প্রতিদিন এটিকে লিড নিউজ করে। প্রথমত, সংবাদটির সত্যতা নিয়ে তেমন সংশয় থাকার কথা নয়। তাহলে বাকি কাগজগুলি নিজেদের এভাবে গুটিয়ে রাখল কেন?‌ অন্তত নানা অ্যাঙ্গেল থেকে ফলো আপ তো হতে পারত। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তাঁকে শতবর্ষে আনতে চাইছে কিনা, সেই মর্মেও তো খবর হতে পারত। পিকে ব্যানার্জি একসময়ের প্রিয় ছাত্রের সন্ধান পেয়ে কী বলছেন, সেই মর্মেও তো ফলো আপ হতে পারত।

কিন্তু সবাই নিজেদের গুটিয়ে রাখলেন। বিভিন্ন কাগজের ক্রীড়াদপ্তরের মাথায় যাঁরা বসে আছেন, তাঁদের মাথায় যে এগুলো আসেনি, এমন নয়। কিন্তু পাছে অন্যকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়ে যায়!‌ এই ঈর্ষা আর অতি চালাকিটাই বাংলা ক্রীড়া সাংবাদিকতাকে অনেকটা পিছিয়ে দিচ্ছে। যেন আমি খবরটা লিখলাম না, অতএব খবরটা চাপা পড়ে গেল। খবরটা প্রথম যেই করে থাকুক, মজিদ এখন কেমন আছেন, কোথায় আছেন, কী করছেন, পাঠককে এগুলো জানানোর কোনও দায় নেই?‌ অধিকাংশ পাঠক একটাই কাগজ পড়েন। অন্যান্য কাগজে কী বেরিয়েছে, অনেকেই জানেন না। তাহলে আমার পাঠকদের আমি জানাবো না কেন?‌ অন্য একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, এটা উল্লেখ করেও তো ফলো আপ করা যেত।

ধরা যাক, গভীর রাতে পেলের মৃত্যু সংবাদ জানা গেল। কোনও একটি কাগজ হয়ত রাতের দিকে খবরটা ধরাল। তার মানে, পরের দিন অন্য কাগজগুলোতে খবরটা থাকবে না?‌ ধরা যাক, ধোনি অবসর নিচ্ছেন, কোনও একটা কাগজে বেরোল। অন্যরা পরের দিন খবরটাই দেবেন না! বাংলা ক্রীড়া সাংবাদিকতাকে কোন খাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে মূলস্রোত কাগজগুলো!‌

যদি সত্যিই মজিদ কলকাতায় আসেন, তখন কে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলবেন, কে ইন্টারভিউ করবেন, তার জন্য লাইন পড়ে যাবে। হয়ত চূড়ান্ত হ্যাংলামিও শুরু হয়ে যাবে। অথচ, সেই মজিদের সন্ধান পাওয়া গেল, তা নিয়ে একটা লাইনও লেখা গেল না!‌ অদ্ভুত এক দ্বিচারিতা। অদ্ভুত এক দৈনতা। কলকাতা ফুটবলে এমন অসংখ্য উদাহরণ তুলে ধরা যাবে। মজিদ ইস্যুতে বিভিন্ন কাগজের ক্রীড়াবিভাগের এই দেউলিয়াপনা আরও একবার প্রকট হয়ে এল।
(‌মিডিয়া সমাচার। বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় বিভাগ। মিডিয়া জগতের নানা দিক সাধারণ পাঠকের অজানাই থেকে যায়। রাজনৈতিক দল নিয়ে, ক্লাব নিয়ে যদি আলোচনা, বিতর্ক হয়, তাহলে মিডিয়ার নানা কাজ নিয়েই বা হবে না কেন?‌ নানা বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনার মঞ্চ। চাইলে আপনারাও অংশ নিতে পারেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রশংসা, সমালোচনা করতেই পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা:‌ bengaltimes.in@gmail.com) ‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.