এই উপেক্ষা কি আশাজির প্রাপ্য!‌

বৃষ্টি চৌধুরি

হাতে থাকা ছোট্ট এই যন্ত্রটা মানুষকে কতটা বিচ্ছিন্ন করে তুলছে। দুজন দুজনের পাশে বসে আছে। অথচ, কেউ কারও সঙ্গে কথা বলছে না। আমি, আপনি সকলেই এমন ছবির সঙ্গে পরিচিত। তেমনই একটা ছবি ফের ভাইরাল হয়ে গেল। যার তার শেয়ার করা ছবি নয়। দিন কয়েক আগে ছবিটি শেয়ার করেছেন স্বয়ং আশা ভোসলে।
কিংবদন্তি গায়িকা এসেছিলেন উত্তরবঙ্গে। একটি গানের অনুষ্ঠানে। বাগডোগরা বিমানবন্দ থেকে কলকাতা হয়ে মুম্বই ফিরে যাওয়ার কথা। আশাজির সঙ্গে তাঁর যন্ত্রশিল্পীরাও এসেছিলেন। এয়ারপোর্টের ভিআইপি লাউঞ্জে বসানো হয়েছিল তাঁদের।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সবাই নিজের মোবাইল নিয়েই বয়স্ত। কেউ কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। কেউ কারও দিকে তাকাচ্ছে না। আর অবাক বিস্ময়ে বাকি চারজনের দিকে তাকিয়ে আছে আশাজি। ভাবতেও অবাক লাগে, পাশে আশা ভোসলের মতো কিংবদন্তি বসে আছেন। অথচ, কারও মধ্যে কোনও হেলদোল নেই!‌ কারও মনে কোনও রোমাঞ্চ নেই!‌ সবাই মোবাইল ঘাঁটছেন‍‌!‌

asha bhosle
অথচ, যে চারজনকে দেখা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে একজন মোটমুটি পরিচিত শিল্পী। বাকিরাও আশাজির সঙ্গে থাকা যন্ত্রশিল্পী। তাঁদের যেটুকু সামাজিক স্বীকৃতি, তার অনেকটাই আশাজিকে ঘিরে। এই শিল্পীরা তিরিশ বছর পরেও হয়ত গর্ব করে বলবেন, আশাজির সঙ্গে বাজিয়েছি। এই ছবিগুলোই হয়ত বাড়িতে টাঙিয়ে রাখবেন। এমনকী এই যে মোবাইল নিয়ে এত খুচুর খাচুর, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, যত ছবি শেয়ার করেন, তার অধিকাংশই আশাজির সঙ্গে তোলা। আশাজির সঙ্গে ঘুরছেন, এটাই হয়ত তাঁদের ইউএসপি। তাঁদের নিজেদের ছবিতে কটা লাইক বা কমেন্ট পড়ে, ঘোর সন্দেহ। আশাজির সঙ্গে থাকা ছবিগুলোর জন্যই বন্ধুমহলে, পরিচিত মহলে গুরুত্ব পান।
অথচ, সেই আশাজি পাশে বসে আছেন। এই কীর্তিমানদের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। এঁরা আপন আপন খেয়ালে মোবাইল–‌চর্চা করেই চলেছেন। স্বয়ং আশাজির মনের অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করুন। হয়ত মনে মনে ভাবছেন, এ কোন অর্বাচীনদের সঙ্গে এলাম। আমি পাশে বসে আছি, অথচ এরা মোবাইল ঘেঁটেই চলেছে!‌ হয়ত ভাবছেন, কী জানি, অনুষ্ঠানের সময় শ্রোতারাও হয়ত এমনটাই করেন। আমরা হয়ত ফুরিয়ে যাচ্ছি। আমাদের উপস্থিতি হয়ত আর আগের মতো মানুষের কাছে কাম্য নয়।
স্বয়ং আশাজিকে যদি এমন উপেক্ষার শিকার হতে হয়, ঘরে ঘরে বন্দি থাকা হাজার হাজার বৃদ্ধ বাবা–‌মায়ের কথা একবার ভাবুন। এমনিতেই তাঁরা কত একা। সন্তান ঘরে থাকলেও হয়ত মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। তাঁদের ছবি কোথাও ছড়িয়ে পড়বে না। এই উপেক্ষা নিয়েই হয়ত তাঁদের বেঁচে থাকতে হবে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.