বিশ্বকাপের ভাবনায় পুজারা ব্রাত্য কেন ?

সুগত রায়মজুমদার
‌সম্প্রতি ভারতের অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট ক্রিকেটে সিরিজ জয় এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। অতীতে এর চেয়েও অনেক শক্তিশালী দল নিয়েও সিরিজ জিততে পারেনি ভারতীয় ক্রিকেট দল। ২০১৮–১৯–এ অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জেতার পেছনে যে ব্যাটসম্যানের অবদান সবচেয়ে বেশি, তিনি হলেন চেতেশ্বর পুআরা। তাঁকে সবসময়ই রাহুল দ্রাবিড়ের উত্তরসূরি বলা হয়। সেটা পুজারা ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় প্রমাণ করেছেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিং ইয়ান চ্যাপেল, পন্টিং, ভিভ রিচার্ডস, গাভাসকারদের মতো ক্রিকেট–বিশেষজ্ঞদের মুগ্ধ করেছে। বিশ্বকাপ দলে পুজারার অন্তর্ভুক্তিই আবার চ্যাম্পিয়নের সুযোগ আনতে পারে। তাঁকে টেস্ট ক্রিকেটের তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলে দিনের পর দিন লোকেশ রাহুলকে সুযোগ দিয়ে পুজারাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। পুজারা কঠিন অস্ট্রেলিয়ার মাঠে প্রমাণ করেছেন, তিনিও আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে কারও চেয়ে কম যান না।
২০১৯–এই একদিনের বিশ্বকাপ ক্রিকেট। আমার মনে হয়, পুজারাকে সেই বিশ্বকাপ দলে রাখলে দলের ভারসাম্য বজায় রাখা যাবে। এখন আর পুজারাকে ঘুমপাড়ানি ব্যাটসম্যান বলা যাবে না। কারণ তিনি সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় যে ক্রিকেটীয় শটের ফুলঝুরি দেখিয়েছেন, তা দেখে আর তাঁকে ব্রাত্য রাখা উচিত হবে না। তাঁকে যদি বিশ্বকাপ দলে রাখে, ভারতীয় দল যথেষ্ট উপকৃত হবে।

pujara
আসন্ন বিশ্বকাপ হবে ইংল্যান্ডের মাঠে। একদিনের ক্রিকেটের বিশ্বকাপে ভারতীয় দল বলতে যা বোঝায়, সেই দলে অবশ্যই রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, পাণ্ডিয়ারা থাকবেন। এঁদের ইংল্যান্ডের মাঠে ভাল খেলার খুব একটা সুনাম নেই। সেজন্যই নির্বাচকরা ধোনিকে দলে নিতে চাইছেন মূলত মিডলঅর্ডারে ভারসাম্য আনতে। ধোনিও এই বয়সে ইংল্যান্ডের মাঠে কতটা ভাল খেলবেন, তা নিয়েও সংশয় আছে। কারণ, সারা বিশ্বে ইংল্যান্ডের মাঠে ক্রিকেট খেলা সবচেয়ে কঠিন। এই অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। ইংল্যান্ডের মাঠে বল সবচেয়ে বেশি নড়াচড়া করে। যেটা ভারতীয় দলের পক্ষে আশাব্যঞ্জক নয়। লিগের খেলায় ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জিতলেও ফাইনালে মহম্মদ আমেরের সামনে একেবারেই অসহায় মনে হয়েছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। এই ভারতীয় দলে যদি টেস্ট ক্রিকেটের তকমা লাগানো পুজারাকে নেওয়া যায়, তা হলে মনে হয় ভারত আবার বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়নের স্বাদ পেতে পারবে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০০৩ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে এই সমস্যার সম্মুখিন হয়েছিল। তখন একজন অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান নিতে চেয়ে অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি কোনও স্পেশালিস্ট উইকেটরক্ষককে না নিয়ে দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান রাহুল দ্রাবিড়কে নিয়েছিলেন। এর ফলও তিনি পেয়েছিলেন। দেশ ফাইনালে উঠেছিল সকলের দুর্দান্ত পারফরমেন্সের জোরে। সেই সময় সব দেশই খুব শক্তিশালী ছিল। সেই দল থেকে সদ্য অস্ট্রেলিয়ায় দুর্দান্ত ফর্মের লক্ষ্মণ বাদ পড়েছিলেন। তা সত্ত্বেও দলটি ছিল ভারতের একদিনের ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা দল। হরভজনকে নিতে গিয়ে কুম্বলেকে বাদ পড়তে হয়েছিল। সেই সময় হরভজনও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ত্রাস ছিলেন। কিন্তু সেই দলে ভারসাম্যের জন্য দ্রাবিড়কে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে নিতে হয়েছিল। মিডল অর্ডারটা ঠিক রাখতে। এবারের বিশ্বাকাপেও ইংল্যান্ডের মাঠের অভিজ্ঞতা–সমৃদ্ধ পুজারাকে দলে নিলে দলটি সবদিক দিয়ে সমৃদ্ধ হবে।কোহলি–‌শাস্ত্রীরা ভেবে দেখতে পারেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *