অন্তরা চৌধুরি
বাস্তবতার প্রসঙ্গে নাই বা গেলাম। শিশুর সারল্য নিয়ে দেখলে রাজ চক্রবর্তীর নতুন ছবি ‘অ্যাডভেঞ্চারস অফ জোজো’ মন্দ নয়। চেনা প্লট, কিন্তু অপূর্ব তার পরিবেশন। এই ছবিটা দেখার পর রাজ চক্রবর্তীর ছবি সম্পর্কে যে উন্নাসিকতা ছিল, সেটা কিছুটা হলেও কাটল। এ ছবি শুধু জোজোর অ্যাডভেঞ্চার নয়। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে যে সুপ্ত অ্যাডভেঞ্চার বাস করে, এই ছবি সেই সত্তারও।
জোজো চরিত্রে যশোজিৎ এককথায় অনবদ্য। তার গাবলু–গুবলু চেহারাটি চরিত্রের সঙ্গে বেশ বিশ্বাসযোগ্য। জোজোর সফরসঙ্গী হয়ে আমরাও তার জেঠুর সঙ্গে বেরিয়ে পড়ি অরুণাচল প্রদেশের বড়পাহাড়ির উদ্দেশে। এই শীতে যদি বেড়াতে কোথাও নাও যাওয়া হয়, তবুও তেমন দুঃখ নেই। এই ছবি সেই আক্ষেপ অনেকটাই মিটিয়ে দিল।
এই ছবিতে রাজ চক্রবর্তী বেশ সুস্থ এবং সুন্দর বার্তা দিয়েছেন হিউমারের মোড়কে। পদ্মনাভ দাশগুপ্তের মুখে বলা সেই সংলাপগুলো মনে রাখার মতো।‘নাম্বার পাওয়াটাই জীবনের শেষ কথা নয়। স্কুলের বাইরেই সবথেকে বড় স্কুল রয়েছে।’ সব অভিভাবক যদি এভাবে ভাবতে পারতেন! ছেলেগুলোর শৈশব আর কৈশোর এভাবে হারিয়ে যেত না।
জোজোর অভিনয় নিয়ে কোনও কথা হবে না। এককথায় ফাটিয়ে দিয়েছে ওই পুচ্ছপাকা ছেলে। সে বাঘকে ভয় পায় না, কিন্তু ইতিহাস বা অঙ্কের প্রশ্নকে রীতিমতো ভয় পায়। হোমওয়ার্ক থেকে পালাতে জঙ্গলের কোর এরিয়াতার কাছে অনেক নিরাপদ আশ্রয়। সে যেন দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছে চেঙ্গিস নামের বাঘকে বাঁচানোর। সে যেন দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছে চোরাশিকারিদের পাকড়াও করে জঙ্গলকে বাঁচানোর। নিজেকে ফরেস্টের ছোট অফিসার বানিয়ে ফেলেছে। আর এসব কাজে তার সঙ্গী শিবু। তার ছোটার আদল কিছুটা দেবের সঙ্গে মিলে যায়। দেবও রাজ চক্রবর্তীর অধিকাংশ ছবিতে ওইরকম হাতের চেটো মুঠো না করে লম্বা করে দৌড়নোর ব্যর্থ চেষ্টা করে। সামিনুল যে দেব নয় সেটা বোঝা উচিত ছিল পরিচালকের।
বাহুবলীর নকল করা দৃশ্য দর্শকের চোখ এড়ায় না। সিনেমার প্লটে গল্পের গরু শুধু গাছে ওঠে না, আকাশেও ওড়ে। এই ছবিতেও না হয় সব দৃশ্যে বাস্তবতা নাই বা খুঁজলাম। কিছু উত্তর না হয় জোর করেই মেলানো হল। কিন্তু জোজোকে সুপারম্যান বানানোর প্রয়াস খারাপ লাগে না। কিশোরের স্বপ্নে কিছুটা কল্পকাহিনী না থাকলেও যে জমে না।
কথায় কথায় বাস্তবের সঙ্গে মিল–অমিল খোঁজার বুদ্ধিজীবীপনা ছেড়ে, শুধু নিষ্পাপ সারল্য নিয়ে সিনেমাটি দেখলে বেশ রোমাঞ্চ জাগে। শিশু, প্রকৃতি, জঙ্গল, ননিবালা এবং চোরা শিকারী মেলবন্ধন বেশ কমল্পিট প্যাকেজ। শুধু চেঙ্গিস যেন বড্ড বেমানান। বড়রা না হয় ছোটদের চশমা পরে সিনেমাটা দেখবে, কিন্তু ছোটোদের টুপি পরানো তো অতটা সহজ নয়। তারাও বেশ বুঝতে পারছে অ্যানিমেশানের কার্যকলাপ। আসলে ছোটদের জন্য লেখা গল্প বা উপন্যাস, বা সিনেমা যত না ছোটদের তার চেয়ে অনেক বেশি বড়দের। সেকথা ভুলে গেলে চলবে কেমন করে!