প্রকাশ চন্দ্র
সকালেই এল দুঃসংবাদটা। নিরুপম সেন আর নেই। বয়স হয়েছিল। অনেকদিন ধরেই ভুগছিলেন। যে কোনও সময় মৃত্যু হতে পারে, এমন একটা আশঙ্কাও ছিল। তবু চলে যাওয়া সবসময়ই বেদনার।
রাতের দিকে এবিপি আনন্দ–তে পুরনো একটি সাক্ষাৎকার সম্প্রচারিত হল। সাক্ষাৎকারটি ২০০৮ সালের। তখনই দেখেছিলাম। পরেও ইউ টিউবের সৌজন্য বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে। তবু আরও একবার দেখলাম।
একজন মন্ত্রীর কতখানি দায়িত্ব, কথাবার্তায় তাঁকে কতটা পরিমার্জিত হতে হয়, কতখানি দূরদর্শী হতে হয়, আরও একবার বোঝা গেল। যাঁরা শুধু গত কয়েক বছরে ফেসবুক ঘেঁটে রাজনৈতিক বোদ্ধা হয়েছেন, তাঁরা হয়ত আগের সময়টা দেখেননি। তাই কোনও তুলনাতেই তাঁদের আগ্রহ নেই। এখন যা দেখছেন, সেটাকেই তাঁদের কাছে স্বাভাবিক মনে হয়।
বেঙ্গল টাইমস জনপ্রিয় মিডিয়া। তার মাধ্যমে সেই ভিডিও লিঙ্কটি শেয়ার করতে চাই। অনেকে হয়ত দেখেছেন। তবু আরও দেখুন। প্রতিটি কথা মন দিয়ে শুনুন। কৃষি থেকে শিল্পে উত্তরণ, সিঙ্গুর থেকে টাটার চলে যাওয়া, রাজ্যে শিল্প সম্ভাবনায় কতখানি আঘাত, এমন নানা প্রশ্নের কী সাবলীল উত্তর।
হ্যাঁ, এই মানুষগুলো কিছু করতে চেয়েছিলেন। নিছক স্বপ্ন দেখানো নয়, সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে চেয়েছিলেন। সস্তা চটক নয়, নিজের ঢাক পেটানো নয়, নির্লজ্জ মিথ্যাচার নয়, চাটুকারিতা নয়। শিক্ষা, রুচি, দূরদর্শিতা, মেধা, বাগ্মীতার এক মিশ্রণ। আরও একবার অনুরোধ করছি, এই ইন্টারভিউটি শুনুন। তারপর মনে করে দেখুন তো, এখনকার মন্ত্রীসভার যাঁরা সদস্য, তাঁদের কাছে এমন যুক্তি, বিশ্লেষণ ও মার্জিত আচরণ আশা করেন? তার থেকেও বড় কথা, এখন সন্ধেবেলায় এসব নিয়ে আর আলোচনা শুনতে পান?
এখন কোথায় মারামারি, কোথায় রথ বেরোলো, কোথায় দাঙ্গার পটভূমি, কোথায় সিন্ডিকেট, কোথায় কূকথা। এসব নিয়েই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায়। কৃষির কথা নেই, শিল্পের কথা নেই, কর্মসংস্থানের কথা নেই। কী সব ভাষা, কী বিকট চিৎকার। কেউ কারও কথা শোনে না। শুধু কুযুক্তির ফোয়ারা। ধন্যবাদ এবিপি আনন্দ। পুরনো সেই মুহূর্ত ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। তখনকার প্রশাসক আর এখনকার প্রশাসকের ফারাকটা আরও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য।