শিলিগুড়ি মোটেই কোনও পর্যটন কেন্দ্র নয়। দার্জিলিং বা সিকিম যাওয়ার পথে সেখানে নামতে হয়। ফেরার সময় সেখান থেকে ট্রেন ধরতে হয়। ব্যাস, তার গুরুত্ব এটুকুই। শুধু কয়েক ঘণ্টার টয় ট্রেন চাপার জন্য কেউ একটা দিন শিলিগুড়িতে নষ্ট করতে চাইবেন না। তাই শিলিগুড়ি থেকে টয় ট্রেনের ইভিনিং সাফারি চালু হলেও তা তেমন সাড়া ফেলবে না। এমনটাই লিখেছেন বিরাট ভদ্র।
খুব ঘটা করে ইভিনিং সাফারি চালু হল টয় ট্রেনে। এখনই বলে দেওয়া যায়, এই পরিকল্পনা তেমন কার্যকরী হবে না। কয়েক মাস যেতে না যেতেই বন্ধ করে দিতে হবে। আসলে, টয় ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের বাস্তববোধের বড়ই অভাব। তাঁরা না বোঝেন পর্যটন, না বোঝেন অর্থনীতি। তাঁরা চমক দেখাতেই বেশি তৎপর। তাই একের পর এক সস্তা চমক মুখ থুবড়ে পড়ে।
এবার তাঁদের নতুন চমক ইভিনিং সাফারি। শিলিগুড়ি থেকে যাবে রংটং। কারা এই ট্রেনে চাপতে পারেন, সে বিষয়ে রেলকর্তাদের স্পষ্ট ধারনা আছে বলে মনেও হয় না। প্রথমেই বলে রাখা ভাল, শিলিগুড়ি মোটেই কোনও পর্যটন কেন্দ্র নয়। দার্জিলিং যেতে হলে, সিকিম যেতে হলে, শিলিগুড়িতে নামতে হয়। আবার ফেরার সময় শিলিগুড়ি থেকে ট্রেন ধরতে হয়। ব্যাস, শিলিগুড়ির গুরুত্ব এটুকুই। কোনও পর্যটককে দেখেছেন শখ করে শিলিগুড়িতে ঘুরতে গেছেন! তাহলে, শিলিগুড়ি থেকে খামোখা পর্যটকরা ওই ট্রেনে চাপতে যাবেন কেন? ওই ট্রেনে চাপার জন্য একটা মূল্যবান দিন নষ্ট করতে যাবেন কেন?
ভাড়া। কোনও সন্দেহ নেই, অনেকটাই বেশি। সর্বনিম্ন এক হাজার। ডাইনিং কোচে ১২০০। তাও আবার মাথা পিছু। যাঁরা দার্জিলিং বা সিকিমে বেড়াতে যান, তাঁদের শতকরা আশি শতাংশ মধ্যবিত্ত। চারজনের পরিবার হলে শুধু ট্রয় ট্রেনেই প্রায় পাঁচ হাজার টাকা চলে যাবে। হাসিমুখে কজন এই বোঝা বইতে পারবেন, সন্দেহ আছে। ভেবে দেখুন, কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি যদি এসি থ্রিতেও কেউ যান, টিকিট মোটামুটি সাতশোর মতো। সেখানে শখের এই রাইডে মাথাপিছু বারোশো। একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না?
হ্যাঁ, কিছু বিদেশি পর্যটক আসেন। কিছু মানুষ বিমানেও আসেন। তাঁদের কাছে হয়ত টাকার অঙ্কটা তেমন নয়। কিন্তু তাঁরা সংখ্যায় কজন? তাছাড়া, তাঁরা দার্জিলিং বা সিকিম থেকে নেমে বাগডোগরায় না গিয়ে খামোখা শিলিগুড়ি জংশনে আসতে যাবেন কেন?
কারও কারও হয়ত রাতে ট্রেন। দুপুরের মধ্যে শিলিগুড়িতে নেমে গেছেন। হাতে অনেকটা সময়। কী আর করা যায়? একটু ট্রেনে চড়া যাক। এই ভেবে কেউ কেউ চেপে বসতে পারেন। কিন্তু ভেবে দেখুন, যাঁরা চার–পাঁচদিন দার্জিলিংয়ে কাটিয়ে আসছেন, তাঁদের ফেরার দিনে সেই রোমাঞ্চ থাকবে তো?
আবার যাওয়ার পথে টয় ট্রেনে চাপবেন, এমনটাও হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, অধিকাংশ ট্রেনই শিলিগুড়িতে ঢোকে সকাল দিকে। তারপরই কেউ দার্জিলিংয়ের দিকে, কেউ ডুযার্সের দিকে, কেউ সিকিমের দিকে রওনা হয়ে যান। দুপুর নাগাদ গন্তব্যে পৌঁছেও যান। শখের একটা টয় ট্রেন সাফারির জন্য সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন? শখের একটা সাফারির জন্য শিলিগুড়িতে রাত কাটিয়ে পরেরদিন পাহাড়ে উঠবেন? চোখে দূরবিন লাগিয়েও এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে?
রেলকর্তারা একদিন বিনে পয়সায় সাংবাদিকদের ট্রেনে চড়ালেন। একদিন পর্যটন সংস্থার কর্তাদের চাপালেন। এতে কিঞ্চিত প্রচার পাওয়া যায়। কিন্তু কাজের কাজ তেমন হওয়ার সম্ভাবনা কম। পর্যটন সংস্থাগুলি ঠেলে গুঁজে কয়েকজন পর্যটককে চাপাতে পারেন। সোশ্যাল সাইটে কিছু সেলফি ছড়াবে। কিন্তু এই সাফারি পর্যটকদের মনে সেভাবে দাগ কাটবে না। শীতের ভরা মরসুমে হয়ত কয়েকজন চাপবেন। তারপর এই পরিষেবা নিশ্চিতভাবেই বন্ধ করে দিতে হবে। এখন থেকেই সেই আশঙ্কার কথা তুলে ধরলাম।
(ভ্রমণ বিভাগ মানে শুধু বেড়ানোর হদিশ নয়। নানা আঙ্গিক থেকে উঠে আসতে পারে লেখা। কোনও নতুন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতে পারেন। পরিকাঠামো সম্পর্কে সমালোচনা থাকতে পারে। সরকারের উদ্দেশে প্রস্তাব থাকতে পারে। আপনারাও অংশ নিতে পারেন এই ওপেন ফোরামে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: bengaltimes.in@gmail.com)