অজয় কুমার
কী হবে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ভবিষ্যৎ? উঁচু উঁচু ইমারতগুলো দেখে অনেকের মনেই আশার সঞ্চার হয়েছিল। আগে কথায় কথায় ছুটতে হত জেলা হাসপাতালে। এবার ব্লকেই যদি এমন পরিষেবা পাওয়া যায়, মন্দ কী? জেলা পিছু তিন–চারটি ব্লকে এমন ইমারত তৈরি হয়েছে। নীল সাদা রঙও দিব্যি হয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি সংশয়ও ছিল। এই হাসপাতাল আদৌ সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে তো? ঘুরপথে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর হাতে চলে যাবে না তো? সরকারি হাসপাতাল পরে নার্সিংহোম হয়ে যাবে না তো?
সেই আশঙ্কাটাই সত্যি হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই শালবনির সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালটিকে জিন্দাল গ্রুপের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিছক জল্পনার স্তরে নেই। সরকারি ঘোষণাও হয়ে গেছে। বাংলার কাগজগুলির কলকাতা এডিশনে খবরটি তেমন গুরুত্ব পায়নি। নবান্নের বিজ্ঞপ্তি টুকরো খবর হিসেবে কোথাও কোথাও জায়গা পেয়েছে। হয়ত অনেকেই বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পারেননি।
শালবনিতে জিন্দাল গোষ্ঠী নাকি হাসপাতাল খুলতে চেয়েছিল। খুব ভাল কথা। এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানোই উচিত। কিন্তু সরকারি টাকায় হাসপাতাল বানিয়ে সেটাকে তুলে দেওয়ার দরকার পড়ল কেন? জিন্দালরা নিজেরাই তো হাসপাতাল বানিয়ে নিতে পারতেন। হওয়ার কথা ছিল ইস্পাত কারখানা। তার জায়গায় ঢাকঢোল পিটিয়ে হল তৃতীয় শ্রেণির একটি সিমেন্ট কারখানা। হওয়ার কথা ছিল ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। তার বদলে হয়েছে শ পাঁচেক মানুষের রুজির ঠিকানা। এবং এই সিমেন্ট কারখানাকেও আদৌ তাঁরা চালাতে চান বলে মনেও হচ্ছে না। কারণ, নাম কে ওয়াস্তে বিনিয়োগ। নিছকই মুখ্যমন্ত্রীর মুখরক্ষার্থে কিছু একটা করতে হত, তাই করা। তার বিনিময়ে সরকারি খরচে তৈরি হাসপাতাল পেয়ে গেল জিন্দাল গোষ্ঠী।
এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মিলিয়ে নেবেন, একে একে বাকি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালগুলিও নার্সিংহোমের চেহারা নেবে। প্রথম প্রথম জনসেবার কথা শোনা যাবে। খরচ হয়ত কিছুটা কম হবে। কয়েক বছর যেতে না যেতেই আসল চেহারা পরিষ্কার হয়ে যাবে। প্রায় সত্তর–আশি কোটি টাকা খরচ করে বানানো হাসপাতালকে জলের দরে তুলে দেওয়া দেওয়া হবে পেটোয়া মালিকদের হাতে। জলের দরে পাওয়ার বিনিময়ে অনেককিছুই দিতে হবে। যথাস্থানে সেসব পৌঁছেও যাবে।