বিকাশবাবু যদি ভেবে দেখতেন!‌

মেয়র নির্বাচন সংক্রান্ত আইন বৈধ না অবৈধ, সেই মামলা চলুক। দ্রুত রায়ের আশাও নেই। কিন্তু মেয়র নির্বাচন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে মামলা করলে সেই বিজ্ঞপ্তি বাতিল হয়ে যেত। রাজ্যপালের সইয়ের পাঁচদিন আগে পুরসভা বিজ্ঞপ্তি জারি করল কীভাবে?‌ তাহলে তো রাজ্যপালের সইয়ের কোনও মূল্যই রইল না। লিখেছেন সরল বিশ্বাস।।

ফিরহাদ হাকিমের মেয়র হতে আপাতত কোনও বাধা রইল না। সোমবারই মেয়র পদে নির্বাচন। ফলাফল কী হতে চলেছে, তা নিয়ে কোনও মহলেই কোনও অনিশ্চয়তা নেই। বামেদের করা মামলায় হাইকোর্ট কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি।

আমি আইনজীবী নই। বিকাশ ভট্টাচার্যের আইনবোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলার ধৃষ্টতাও আমার নেই। তাঁরা আইনের বোদ্ধা। ৭৪ তম সংবিধান সংশোধনীর ওপর মামলা করেছিলেন। যার মূল সারবত্তা, বিধানসভায় যে বিশেষ সংশোধনী আইন আনা হয়েছে, তাতে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর দরকার। কোনও সন্দেহ নেই, এই ধারায় মামলায় শুনানির জন্য অনেকটাই সময় লাগবে। এত তাড়াতাড়ি এর রায় ঘোষণার আশা না করাই ভাল।

bikash

আমার মনে হয়, অন্য একটি বিষয়কে সামনে রেখে এই মামলা করা যেত। সেটি হল পুরসভার মেয়র নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি। সেই বিজ্ঞপ্তিতে কী ছিল, তা চোখে দেখার সুযোগ আমার হয়নি। আশা করা যায়, বাম কাউন্সিলরদের কাছে তার কপি ছিল। সেই কপি জোগাড় করা বিকাশবাবুর পক্ষে অসম্ভব ছিল না।

মেয়র পদে শোভন চট্টোপাধ্যায় পদত্যাগ করেন ২২ নভেম্বর। সেদিনই নতুন মেয়র নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। সেই বিজ্ঞপ্তিতে কী ছিল?‌ পুরনো আইন অনুযায়ী কাউন্সিলরদের মধ্যে থেকেই মেয়র নিয়োগ করার কথা?‌ নাকি কাউন্সিলর নন, এমন কেউ মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন?‌ কাগজে প্রকাশিত বয়ান অনুযায়ী, ২৬ নভেম্বর থেকে ২৯ নভেম্বরের মধ্যে মনোনয়ন জমা দিতে হবে। ৩ ডিসেম্বর নির্বাচন।

বিধানসভায় নতুন সংশোধনী বিল পেশ হয় ২২ নভেম্বর। কিন্তু রাজ্যপালের সই হয় ২৭ নভেম্বর। ২৮ নভেম্বর ফিরহাদ হাকিম মনোনয়ন জমা দেন।

যতক্ষণ রাজ্যপালের সই না হচ্ছে, ততক্ষণ বিধানসভায় পাশ হলেও তা আইন হিসেবে গণ্য হয় না। অর্থাৎ, কাউন্সিলর না হলেও মেয়র পদে লড়াই করা যাবে, এই আইন কার্যকর হয় ২৭ নভেম্বর থেকে। তাহলে, তার পাঁচদিন আগে বিজ্ঞপ্তি জারি হল কীভাবে?‌

সেই বিজ্ঞপ্তি যদি পুরনো আইন অনুযায়ী হয়, তাহলে তো ফিরহাদ হাকিমের মনোনয়ন জমা দেওয়ার এক্তিয়ারই থাকার কথা নয়। কারণ, তিনি কাউন্সিলর নন। আবার যদি নতুন আইন অনুযায়ী হয়, তাহলে তখনও পর্যন্ত নতুন আইন চালুই হয়নি। যে আইন ২৭ নভেম্বর তৈরি হল, সেই আইনের ভিত্তিতে ২২ নভেম্বর কীভাবে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়?‌ সেই বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে কীভাবে মনোনয়ন জমা হয় ? তাহলে তো রাজ্যপালের সইয়ের কোনও মূল্যই রইল না। সরাসরি রাজ্যপালের পদকে ও আইনি ব্যবস্থাকে অবমাননা।

আবার বলছি, আমি আইনের তেমন কিছুই বুঝি না। ধারা–‌উপধারা সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই। কিন্তু সাধারণ একজন নাগরিক হিসেবে সেই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আমার মনে হয়, সেই বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে যদি মামলা করা যেত, অন্তত বিজ্ঞপ্তি খারিজ করা যেত। আবার নতুন করে ভোটের দিন ঘোষণা করতে হত। সেটাই হত নৈতিক জয়। অন্তত তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে সরকার বা পুরসভা যে ন্যূনতম আইনটুকুও মানছে না, এই বার্তাটা দেওয়া যেত।

‌সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে যে মামলা চলছে, সেটা চলুক। কিন্তু তার আগে বিজ্ঞপ্তি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলা যায় কিনা বিকাশবাবু ভেবে দেখুন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.