ধীমান সাহা
এই রাজ্যে কিছু ঘটলেই তৃণমূল নেতাদের কী প্রতিক্রিয়া হবে, আগাম বলে দেওয়া যায়। সূর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণ–যাই ঘটুক, এর পেছনে বিজেপি–র হাত ঠিক বেরিয়ে আসবে। যাক, ৩৪ বছরের ভূতটা বোধ হয় কিছুটা নেমেছে। আগে যাই ঘটত, শেয়ালের কুমিরছানা দেখানোর মতোই ওই ৩৪ বছরের ছানাটাকে বের করে আনা হত। ভাল কিছু হলেই বলা হল, ৩৪ বছরে কখনও হয়নি। আর খারাপ কিছু ঘটলেই বলা হত, ৩৪ বছরে এমন অনেক হয়েছে।
ইদানীং সবকিছুতেই বিজেপি–র ছায়া দেখছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। যেখানে যেখানে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, দুই গোষ্ঠীর মারামারি, সব চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিজেপির নামে। একেবারে সাম্প্রতিক উদাহরণ খয়রাশোলে তৃণমূল নেতার মৃত্যু। ব্লক সভাপতি দীপক ঘোষ গুলিবিদ্ধ। দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতালে এনেও বাঁচানো যায়নি। এলাকাসুদ্ধু সবাই মোটামুটি আন্দাজ করতে পারছেন, এই খুনের পেছনে কে কে থাকতে পারে। বাড়ির লোক, এলাকার লোক বেশ ভাল করেই জানেন, কী কারণে এই খুন। পুলিসও বেশ ভালই জানে।
কিন্তু মিস্টার উন্নয়ন। শ্রীযুক্ত অনুব্রত মণ্ডল দায় চাপিয়ে দিলেন বিজেপির ঘাড়ে। তাঁর দাবি, ‘ঝাড়খণ্ড থেকে গুন্ডা ভাড়া করে এনে গুলি চালানো হয়েছে।’ এই প্রবণতা নতুন নয়। গত কয়েক মাস ধরে এভাবেই বিজেপি–র পালে হাওয়া দিযেই চলেছে শাসকদল। বাড়ির লোক দায়ী করছেন তৃণমূলেরই অন্য গোষ্ঠীর নেতাদের। তাঁদের নামে এফ আই আর–ও হচ্ছে। কিন্তু শেষমেষ নানা টোপ দিয়ে সেই এফ আই আর বদলে ফেলা হচ্ছে। দায় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিরোধীদের ঘাড়ে।
সবই আসলে অনুপ্রেরণা। বিনা লড়াইয়ে ভোটে জেতার সাইড এফেক্ট। রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড় করিয়ে বিরোধীদের আটকে রাখা যায়। নিজের দলের বেপরোয়া হয়ে যাওয়া গুন্ডারা কথা শুনবে কেন? যে পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির মেম্বার হওয়ার জন্য গুন্ডা নামাতে পারে, সে প্রধান বা সভাপতি হতেও নামাতে পারে। সে চাইবে দখলদারি। আর এই দখলদারির পথে প্রধান বাধা দলেরই অন্য কোনও মাতব্বর। নিজের রাস্তা পরিষ্কার করতে তাকে সরিয়ে দাও। এটাই সহজ রাস্তা। দলের বদনাম হল কিনা, এসব ভাবতে ওদের বয়েই গেছে। গোটা রাজ্যজুড়ে গায়ের জোরে পঞ্চায়েত দখল করে যদি দলের বদনাম না হয়, তাহলে দু –একটা খুনেও কিছু হবে না। সময়মতো সব ধামাচাপা পড়ে যাবে, এই সারসত্যটা জেলা জেলায় লুম্পেন বাহিনী ভালভাবেই বুঝে গেছে।
এই মাতব্বরেরা জানে, খুন করার পর বিজেপির নামে চালিয়ে দিলেই হল। দল ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে যাবে। কেঁচো খুঁড়তে গেলে অনেক কেউটে বেরিয়ে যাবে, এই ভয়টাও তো আছে। তাই লোক দেখানো তদন্ত হবে, দু–একজন গ্রেপ্তার হবে, ঠিক সময়ে তারা ছাড়াও পেয়ে যাবে। এর বেশি কিছুই হবে না।
এই অশনি সংকেত এখনও বুঝতে পারছেন না শ্রীমান অনুব্রতরা। ভাবছেন বিজেপি–র ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দিলেই দু–দিন পরেই ধামাচাপা পড়ে যাবে। কিন্তু এখনও সচেতন না হলে এই প্রবাহ চলতেই থাকবে। তখন কোনও অনুপ্রেরণাতেই আর এই গৃহযুদ্ধ সামাল দেওয়া যাবে না।