ছবির নামে কিশোর কুমার। পরিচালনায় কৌশিক গাঙ্গুলি। অভিনয়ে প্রসেনজিৎ। কিশোরের অন্তত দেড় ডজন গান। রাজস্থানে কিডন্যাপ। চমক অনেক ছিল। কিন্তু ছবিটা বাস্তবের মাটি খুঁজে পেল না। কিশোর কুমার জুনিয়র দেখে বিশ্লেষণ করলেন কুণাল দাশগুপ্ত।।
সত্যজিৎ রায় হলে এই ছবিতে গৌতম ঘোষকে দিয়ে গাওয়াতেন। চারুলতায় সত্যজিৎ রায় যে সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলেন, কিশোর কুমার জুনিয়র–এ কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ততটা সাহস দেখাতে পারেননি। বক্স অফিসে ‘নাচ মেরি বুলবুল তো পয়সা মিলেগা’ হলেও ছবিটা বাস্তবের মাটি খুঁজে পেল না।
একজন একজন কিশোর কণ্ঠী শিল্পীর জীবন নিয়ে সিনেমা হচ্ছে, সেখানে গৌতম ঘোষের বদলে অন্য বক্স শিল্পী গেয়ে চলেছেন, মানা গেল না। ঘরে বাইরে ছবিতে রায়সাহেব কিশোর কুমারকে দিয়ে খালি গলায় বিধির বাঁধন রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইয়েছিলেন। ছবির চাহিদা মেটাতে না পারলে ছবি শুধু রুপোলি পর্দায় কিছুদিনের জন্য টিকে যায়। তারপর একদিন পাখি হয়ে যে সে কোথায় উড়ে যায়, কেউ তার হদিশ পায় না।
বেশিরভাগ গানে চন্দ্রবিন্দুর অত্যাচার এবং বারবার স–এর বিকৃত উচ্চারণ সমানভাবে কানে আর মনে বিঁধেছে। গৌতম ঘোষের বয়স হয়েছে ঠিকই, কিন্তু স্টুডিওতে স্পিচ কারেকশন সফটওয়্যারের সাহায্য নিয়ে গানগুলোকে নিশ্চয় মানানসই করা যেত। রেকর্ড থেকে পুরানো গানও ব্যবহার করা যেত। কয়েকটা গানে অমিত কুমারকেও ব্যবহার করা যেত। তাতে ভালই হত। নামের সঙ্গে গানের একটা সামঞ্জস্য থাকত।
এ ছবির গল্পতেও পরিচালক তাঁর কল্পনার পাখা মেলে দক্ষিণারঞ্জনবাবুর রূপকথার গল্পে চলে গিয়েছেন। এখন কি মধ্যরাতে ‘মাচা’ অনুষ্ঠান হয়? তাও দেখানো হয়েছে। সময়টা কিন্তু হালফিলের। কারণ, ছবির জুনিয়র আর্টিস্টের হাতে ‘এই সময়’ পত্রিকা দেখা গেছে। অনেকের হাতে স্মার্টফোন দেখা গেছে। টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখা গেছে। রান্নায় বিশেষ ব্র্যান্ডের মশলাও দেখা গিয়েছে। আসলে, কিশোর কুমারের নামেই মানুষের মস্তিষ্ককোষ ভুলভুলাইয়াতে আক্রান্ত হয়। পঞ্চমের কাছ থেকে ধার নিয়ে বলি, গোলমাল হ্যায় ভাই সব গোলমাল হ্যায়।
একজন গায়ক কেন্দ্রীয় সরকারের আমন্ত্রণে রাজস্থান থেকে অপহৃত হলেন। কেন ধরল দুষ্কৃতীরা? তাঁরা তো জানেই না কিশোর কুমার জুনিয়রকে। ভিভিআইপি–ই বা বুঝল কী করে? অপহৃত হওয়ার পর সরকারের তরফে কোনও হেলদোল নেই। অপহৃতের বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করছে দুষ্কৃতী। এ যেন এক গোলকধাঁধা। আরও একটা বিষয় খটকা লাগল। একেবারে শেষ দৃশ্যে, সেরিব্রাল অ্যাটাকে আক্রান্ত বাবাকে গান শোনাচ্ছে ছেলে, তাও আবার মঞ্চে। সেদিনও আকাশে ছিল কত তারা। এমন সচেতন বিকৃতি? যে বাবা কিশোর কুমারকে ইশ্বর মনে করেন, তাঁর সামনে এমন বিকৃত গান গাওয়ার ছাড়পত্র পরিচালক দিলেন কী করে? এ তো আরও একবার সেরিব্রাল অ্যাটাককে আমন্ত্রণ জানানোর সামিল।
তবে হ্যাঁ, অপরাজিতা আঢ্যর অভিনয়টি মনে দাগ কাটার মতো। প্রসেনজিতকে দু–একবার উত্তম কুমার মনে হয়েছে।
এমন গল্প তো হতে পারত যে, এক প্রতিষ্ঠিত গায়ক জীবনে কোনও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন না। তাঁর নকল করা গায়করা পদ্মশ্রী ইত্যাদি ইত্যাদি পেয়ে গেলেন। পরিচালক, শিল্পীরা পথে নামলেন। প্রয়াত শিল্পীকে মরণোত্তর সম্মান দিতে বাধ্য হল সরকার।
শিল্পী মহোদয়গণ, কিশোর কুমারকে নিয়ে অনেক ব্যবসা হল। এবার থামুন।
‘গায়ে লাগে ছ্যাঁকা ভ্যাবাচ্যাকা হাম্বা হাম্বা টিক টিক টিক টিক।’
1 comment
এক কথায় দারুণ !