নন্দ ঘোষের কড়চা
পুজোর আবহে আবার ফিরে এলেন নন্দ ঘোষ। একগুচ্ছ বাংলা ছবি বেরোচ্ছে শুনেই দেখতে চলে গেলেন সৃজিত মুখার্জির ছবি— এক যে ছিল রাজা। ফিরে এসেই বললেন, রিভিউ লিখব। তাঁকে থামায়, এমন সাধ্য কার! পুজোর বাজনা শুনতে শুনতেই লিখে ফেললেন নন্দ ঘোষের কড়চা।
নাহ, সৃজিত মুখুজ্জের পুচ্ছপাকামি আর গেল না। এই লোকটাকে আমি দু চোখে সহ্য করতে পারি না। দেখতে পারি না, অতএব চলন বাঁকা, এটাই আমার সহজ দর্শন। তাছাড়া, আমি নন্দ ঘোষ। লোককে একটু গালমন্দ করি, এমন দুর্নাম আমার আছে। এই সৃজিত মুখু্জ্জেকে যে কতবার গালমন্দ করেছি, বেঙ্গল টাইমসের পাঠকরা জানেন।
বিশ্বাস করুন, পুজোর আগে আমার মনে তেমন রাগ ছিল না। শরতের আকাশ, কাশফুল–সব মিলিয়ে আমিও বেশ ফুরফুরেই ছিলাম। ঠিক করেছিলাম, অহেতুক রাগব না। এমনকি যাকে একেবারেই সহ্য করতে পারি না, সেই সৃজিতকেও পিঠ চাপড়ে দেব। অনেক আশা নিয়ে গেলাম ‘এক যে ছিল রাজা’ দেখতে। ভাবলাম, অনেকদিন তো হল, এবার নিশ্চয় লোকে বুঝতে পারবে, এমন ছবি বানাবে। ও হরি। এ ছেলে শোধরানোর নয়। এর পুচ্ছপাকামি যাওয়ার নয়। আবার গেল মটকা গরম হয়ে।
ওর সব ছবিতেই নাকি বিরাট এক রিসার্চ থাকে। এই ছবিতে নাকি আরও বেশি রিসার্চ আছে। অজানা এক ইতিহাস নাকি উঠে এসেছে। রিসার্চ না হাতির মাথা! আবার সেই আজগুবি গাঁজাখুরিকে রিসার্চ বলে চালানোর চেষ্টা। উত্তম কুমারের জুতোয় পা গলানোর কেন যে এত শখ! অটোগ্রাফ করল, সেটা নাকি নায়কের ছায়া। অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি থেকে ঝেড়ে করল জাতিস্মর। চৌরঙ্গির দিকেও হাত বাড়িয়েছে। আর এবার ধরল সন্ন্যাসী রাজাকে। কেন বাপু? আর কাউকে পাওনি। উত্তম কুমার নেই বলে তার ছবিগুলোকে যত খুশি বিকৃত করে যাবে! তারপর বলবে, ওই ছবিটায় কিছুই রিসার্চ ছিল না। যত রিসার্চ নাকি পুচ্ছপাকা সৃজিতের ছবিতে। খামোখা উত্তম কুমারকে নিয়ে টানাটানি করা কেন বাপু? অন্য কোনও মৌলিক কাহিনী নিয়ে যত খুশি রিসার্চ করো না বাপু।
এর চেয়ে সন্ন্যাসী রাজা ঢের ভাল ছিল। এত বছর পরেও লোকে দেখে, মুগ্ধ হয়, সেই গান আজও মুখে মুখে ফেরে। আর এখানে বেচারা যিশুকে ন্যাঙোট পরিয়ে কিনা পোস্টার ছাপিয়ে দিল! ন্যাঙোট পরা ছবি কখনো পোস্টার হয়! আর যিশুও তেমনি! ভাবল দারুণ সুযোগ পেয়েছি, অমনি দাঁত কেলিয়ে রাজি হয়ে গেল। যিশুকে নয়, বাংলা সিনেমাকেই প্রায় অর্ধনগ্ন করে দিল। উত্তম কুমারকে তো এমন ন্যাঙোট পরতে হয়নি। ভাওয়াল সন্ন্যাসী না হয় কয়েকবছর সাধুই হয়েছিল, তাই বলে বাংলা বলতেই ভুলে গেল! বাংলাদেশের রাজা, অথচ, হিন্দির টানে বাংলা বলতে হচ্ছে! আর কোর্টরুমে যা হল! আপন মনের মাধুরি মিশায়ে গল্পের গরুকে দেদার গাছে চড়িয়ে দেওয়া হল। আর গানের তো মাথামুণ্ড নেই। কেউ কোনওদিন ওই গান গাইবে না।
বেঙ্কটেশ ফিল্মসকেও ধন্য। এত টাকা হয়েছে যে এভাবে অপচয় করতে হবে! জেনেশুনেও কেউ সৃজিত মুখার্জির ছবিতে টাকা ঢালে! কখনও দার্জিলিং, কখনও রাজস্থান, কখনও বেনারস। যেখানে পারছে, ক্যামেরা প্যান করে দিচ্ছে। প্রোডিউসারের টাকা এতই সস্তা! কী জানি, এরপর হয়ত দেখব, ছবিটা কান–নাক–গলা এসব ফেস্টিভালে পুরস্কার পেয়ে গেল। ওরা তো বাংলা বোঝে না। তাই ওরাই পুরস্কার দেবে। ওই কান–নাক–গলাই হল, বাঙালির হৃদয় যে বহুদূরে। সেখানে পৌঁছনও এই পুচ্ছপাকা কুলীন বামুনের কম্ম নয়।
(নন্দ ঘোষের কড়চা। বেঙ্গল টাইমসের জনপ্রিয় বিভাগ। নন্দ ঘোষের বয়ানে ফিল্ম রিভিউ। এটিকে নিছক মজা হিসেবেই দেখুন। অন্যান্য কয়েকটি ছবিরও রিভিউ করবেন নন্দ ঘোষ। সেগুলিও পড়ুন। )