শান্তনু ব্যানার্জি
আবহাওয়া জনিত পশ্চিমী ঝঞ্ঝা বাংলায় শীতের আমেজ পোয়াতে বাধা সৃষ্টি করে থাকে। বাঙালি হাপিত্যেস করে থাকে কখন শীতের দুপুরে ভাত ঘুমে চাঁদর মুড়ি দিয়ে একপ্রস্থ ঘুমিয়ে নেবে। কিন্তু হায়! শীতের আমেজ শুধু বঙ্গের বুকে চাঁদর মুড়ি দিয়ে কাটিয়ে দেবেন? কাছে পিঠে এক সপ্তাহের জন্য ঘুরে আসতেই পারেন।
আর নতুন বছরের শুরুটা বাংলার বাইরে পা রেখে শুরু করলে কথাই নেই। বাংলার বাইরে দিন কয়েকের জন্য ঘুরে আসার প্রসঙ্গে অনেকের মুখেই অনেক নাম ফুটে উঠবে। আর তার মধ্যে বছরের শুরুটা যদি মধুপুর আর গিরিডি হয়ে শুরু হয় তাহলে আর কোন কথাই নেই। এই দুই শহরের আনাচে কানাচে এখনও অনেক বাঙালি পরিবার বসবাস করে থাকেন। নিজেদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সাহিত্যবোধ আর সর্বোপরি বাঙালিয়ানাকে এখনও সযন্তেই লালন পালন করে চলেছেন এই দুই শহরের বাঙালি পরিবারগুলি। যদিও ‘অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম’ এর পথে চলে অনেকেই আজ কলকাতামুখী হয়েছেন। নতুবা বার্দ্ধ্যকজনিত কারণে কলকাতায় চলে এসেছেন। তবে নিজেদের কৃষ্টিকে আঁকড়ে ধরে রাখার আকুতি এখনও মধুপুর আর গিরিডিতে বসবাসকারী বাঙালি পরিবারগুলির মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। আর এই আকুতি থেকেই মধুপুরে প্রতি বছর বাঙালিদের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব দূর্গাপুজো মহাসমারোহে পালিত হয়ে থাকে।
আর তাই বাংলার বাইরে পা রেখে বছরের শুরুতেই প্রবাসী বাঙালিদের বসবাসের স্থানে একবার ঘুরেই আসুন। প্রকৃ্তির অপার সৌন্দর্যকে দু চোখ ভরে মনের আয়নায় এঁকে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগকে হাতছাড়া হতে দেবেন না। একবার পশ্চিমের হাওয়ায় পা রেখে দেখুন বয়স আপনার এক লাফে অনেকটাই কমে যাবে! যাবেন কীভাবে! হাওড়া স্টেশন থেকে তুফান মেল, মোকামা প্যাসেঞ্জার ট্রেন রয়েছে। উঠে পড়ুন ট্রেনে, একদিনের যাত্রাপথ। এছাড়া দিল্লীগামী (ভায়া পাটনা-মোগলসরাই) ট্রেন রয়েছে। মধুপুর জংশন স্টেশনে নেমে আশে পাশেই ধর্মশালা আর হোটেল রয়েছে। এরপর বিশ্রাম নিয়ে মধুপুরের অলিতে গলিতে ঘুরে আসুন। অনেক অজানা অচেনা স্থাপত্য কীর্তির নির্দশন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। রয়েছে কালী মন্দির, কপিল মঠ, পঞ্চ মন্দির। মধুপুরের সবথেকে বড় আকর্ষণ মধুপুর রাজবাড়ি। একদা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের কিছু সময় কেটেছিল এই রাজবাড়িতে। যে আরাম কেদেরায় বসে কবিগুরু তাঁর চিন্তার অভিব্যক্তিকে লেখনীর ছোঁয়ায় মর্মস্পর্শী করে তুলেছিলেন সেই আরাম কেদারা এখনও অক্ষত রয়েছে। আপনি ইচ্ছে করলে মধুপুরের এই রাজবাড়িতেও থাকতে পারেন। তবে স্টেশন থেকে রাজবাড়ি একটু ভিতরের দিকে । রাজবাড়ির পাশেই শতাব্দী প্রাচীন একটি গির্জা রয়েছে। যা মধুপুর শহরের এক বিশেষ আকর্ষণ।
দিন কয়েক মধুপুরে কাটানোর পর মধুপুর জংশন স্টেশন থেকেই গিরিডিগামী মেমু ট্রেন (লোকাল ট্রেন) ছাড়ে। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই আপনি পৌছে যাবেন গিরিডি। গিড়িডি স্টেশন রোডে আপনি থাকার হোটেল পেয়ে যাবেন। আর গিরিডিতে থাকতে না চাইলেও অসুবিধার কিছু নেই। গিরিডি স্টেশন রোড থেকেই অটো পরিষেবা পেয়ে যাবেন। অটোতে দর কষাকষি করে ঘুরে আসুন উস্রী ঝর্ণা। এর স্থানীয় নাম ওয়াটার লেক। এই নামেই গিরিডি অঞ্চলের লোকেরা উস্রী ঝর্নাকে চেনে। ঘন্টা চারেক জঙ্গলে ঘেরা চড়াই উৎরাই পথ পেরিয়ে আপনি উস্রী ঝর্নার সৌন্দর্যকে উপভোগ করে নিতে পারবেন। একদা মাওবাদী অধ্যুষিত জঙ্গলে ঘেরা উস্রী ঝর্না বর্তমানে পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন বিদ্যালয়গুলির কাছেও ধীরে ধীরে শিক্ষামূলক ভ্রমণকেন্দ্র হয়ে উঠছে। ঘন্টা চারেকের উস্রী ঝর্ণার অপরূপ প্রাকৃ্তিক সৌন্দর্য আপনার জীবনের সেরা সঞ্চয় হয়ে থাকবে! আপনি যদি গিরিডিতে রাত্রিবাস করতে চান তাহলে থাকতে পারেন। আর নয়তো মধুপুরে ফিরে আসতে পারেন।
তবে গিরিডি থেকে আপনি হাওড়া স্টেশনগামী কোন ট্রেন পাবেন না। গিরিডি থেকে মেমু ট্রেন (লোকাল ট্রেন) ধরে আপনাকে মধুপুর জংশনে আসতেই হবে। মধুপুর জংশন থেকে আপনি হাওড়া স্টেশনগামী অনেক ট্রেন পেয়ে যাবেন বিভিন্ন সময়ে। তাই আর দেরি না করে বছরের শুরুতেই মধুপুর আর গিরিডি যাওয়ার প্রস্তুতি সেরে ফেলুন!