অনির্বাণ বসু
বিজেপি–র ডাকে বন্ধ হয়ে গেল। এই বন্ধে যত না কৃতিত্ব বিজেপি–র, তৃণমূলের অবদান তার থেকে ঢের বেশি। বন্ধ কে ঘিরে বিজেপি যত না প্রচার করেছে, তার থেকে বন্ধ ব্যর্থ করার প্রচার তৃণমূল অনেক বেশি করে ফেলেছে। ফলে, বন্ধের কথা অনেক বেশি মানুষ জেনে ফেলেছেন। সাহস জোগানোর বদলে আসলে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করেছেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো।
আর বিজেপি–কেও বলিহারি। তাঁদের দাবি কী? ইসলামপুর কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত করাতে হবে। কোন মুখে, কোন লজ্জায় তাঁরা সিবিআই চাইছেন, তাঁরাই জানেন। সাড়ে চার বছর ধরে সারদা কাণ্ডের সিবিআই তদন্ত চলছে। তদন্ত কতটুকু এগিয়েছে? লোকদেখানো কয়েকজনকে গ্রেপ্তার। একে একে প্রায় সবাই জামিনও পেয়ে গেছেন। এখনও চার্জশিটও দেওয়া যায়নি। যেটা সাতদিনে সম্ভব ছিল, সেটা সাড়ে চার বছরেও করতে পারলেন না সিবিআই কর্তারা।
না, সিবিআইয়ের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি না। মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, সিবিআই–কে স্বাধীনতা দেওয়া হলে তাঁরা পাঁচদিনেই অনেক কিছু বের করে ফেলতে পারেন। তাহলে সিবিআই হাত গুটিয়ে বসে থাকছে কেন? সহজ কথা, মোদি–রাজনাথরা চাননি। তাঁরা চেয়েছেন, সিবিআই এভাবেই ঢিমেতালে চলুক। তাহলে ভবিষ্যতে তৃণমূলের সাহায্য পাওয়া যাবে। লোকসভা ভোটের পর মমতার সাহায্য নিতে হতেই পারে। সেই দরজাটা কখনই বন্ধ করতে চাইবেন না মোদি–অমিত শাহরা।
সাড়ে চার বছরে সিবিআই যে অশ্বডিম্ব প্রসব করেছে, রাজ্যের পাঁচজন সিভিক ভলান্টিয়ার বোধ হয় তাঁদের চেয়ে ভাল তদন্ত করতেন। এরপরেও অবাক লাগে যখন দেখি বিজেপি নেতারা সিবিআই তদন্ত দাবি করছেন। সিবিআই–এর বিশ্বাসযোগ্যতাকে একেবারে তলানিতে এনে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। এখন আর খোদ বিজেপির লোকেরাই সিবিআই–কে বিশ্বাস করেন বলে মনে হয় না। তাহলে সিবিআই তদন্ত দিয়েই বা কী হবে? সেই তো পাঁচ বছর পর সিবিআই বলবে, রাজ্য সরকার তদন্তে সহযোগিতা করছে না। এটা বুঝতেই সিবিআইয়ের পাঁচ বছর লেগে যাবে। যে পুলিস কর্তারা মূল অভিযুক্ত, আজ পর্যন্ত তাঁদের ডাকার হিম্মৎ হল না। যেটা প্রথম তিনদিনেই করা উচিত ছিল, সেই সামান্য কাজটা আজও করতে পারেননি।
বিজেপি নেতাদের অনুরোধ, আগে দিল্লির নেতাদের বলুন, সিবিআইয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে। আগে বলুন, সারদা–নারদার ফাইলগুলো ধুলো ঝেড়ে তাক থেকে নামাতে। আগে সারদা–নারদার কিনারা হোক। যদি পারেন, তারপর সিবিআই দাবি করবেন। তার আগে ভুলেও ওই নাম মুখে আনবেন না।